তুরস্কে অবস্থিত ঐতিহাসিক স্থাপনা হায়া সোফিয়াকে ভূমিকম্পের ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে সংস্কার কাজের নতুন পর্যায় শুরু হয়েছে। প্রায় ১,৫০০ বছরের পুরনো এই স্থাপনার মূল গম্বুজ এবং অর্ধ-গম্বুজগুলোকে ভূমিকম্প সহনীয় করে তোলার জন্য এই সংস্কার কাজ করা হচ্ছে।
এর পাশাপাশি, পুরনো হয়ে যাওয়া সীসার প্রলেপ পরিবর্তন এবং ইস্পাতের কাঠামোতেও আধুনিকীকরণ করা হবে।
ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি বাইজান্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ানের শাসনামলে ৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়। পরবর্তীতে ১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পর এটি মসজিদে রূপান্তরিত হয়।
তুরস্কের আধুনিক প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক ১৯৩৪ সালে এটিকে জাদুঘরে পরিণত করেন। এরপর ২০২০ সালে তুরস্কের সর্বোচ্চ আদালত এটিকে পুনরায় মসজিদে রূপান্তরের অনুমতি দেয়।
২০২৩ সালে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ৭.৮ মাত্রার এক ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ৫০,০০০ এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
যদিও ইস্তাম্বুলে সরাসরি তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি, তবে ভূমিকম্পের কারণে শহরটিতেও ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শহরটি ফল্ট লাইনের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় এখানেও ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে।
নির্মাণ প্রকৌশলী ড. মেহমেত সেলিম ওকতেন জানিয়েছেন, এই সংস্কার কাজটি বিগত ১৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি আরও বলেন, “আমরা হায়া সোফিয়ার প্রধান গম্বুজ এবং মিনারগুলোর ভূমিকম্প সহনশীলতা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছি।
এক্ষেত্রে আমরা আধুনিক ও হালকা উপকরণ ব্যবহার করব, যাতে জনসাধারণের জন্য এটি সবসময় খোলা থাকে।
সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে, স্থাপনার পূর্ব দিকের অংশে একটি টাওয়ার ক্রেন স্থাপন করা হবে। এটি নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনে সাহায্য করবে এবং সংস্কার কাজকে আরও দ্রুত সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে।
বর্তমানে সংস্কার কাজ নির্বিঘ্নে চলছে এবং জনসাধারণের জন্য এটি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুপার্ট ওয়েগারিফ এই সংস্কার পরিকল্পনার প্রশংসা করে বলেন, “হায়া সোফিয়া বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্মৃতিস্তম্ভ। ভূমিকম্পের হাত থেকে এটি রক্ষা করতে এবং এর ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এই সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।
কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংস্কার কাজ শেষ হতে কত সময় লাগবে তা এখনো নিশ্চিত নয়, তবে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে এর কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস