ফেসবুকে ভুয়া রাইড-শেয়ারিং ও ডেলিভারি অ্যাকাউন্ট কেনাবেচা: বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি।
বর্তমান ডিজিটাল যুগে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে পরিষেবা গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে, নিরাপত্তা ঝুঁকিগুলোও বাড়ছে, যা উদ্বেগের কারণ।
সম্প্রতি, টেক ট্রান্সপারেন্সি প্রজেক্ট (টিটিপি)-এর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ফেসবুকের কিছু গ্রুপে ভুয়া রাইড-শেয়ারিং ও ডেলিভারি সেবার অ্যাকাউন্ট কেনাবেচা হচ্ছে। এর ফলে গ্রাহকদের নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
টিটিপি-র অনুসন্ধানে জানা যায়, ফেসবুকের অন্তত ৮০টি গ্রুপে নিয়মিতভাবে উবার, পাঠাও-এর মতো রাইড-শেয়ারিং এবং খাদ্য সরবরাহকারী ডেলিভারি সেবার অ্যাকাউন্ট কেনাবেচা ও ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এসব গ্রুপের সদস্যরা ড্রাইভার বা ডেলিভারি পার্সন হিসাবে কাজ করার জন্য ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি বা ভাড়া নেওয়ার প্রস্তাব দেয়।
এর মাধ্যমে, যারা এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে কাজ করতে চায়, তারা তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক এবং অন্যান্য যাচাই প্রক্রিয়া এড়িয়ে যেতে পারে।
বিষয়টি উদ্বেগের কারণ, কারণ এর ফলে প্ল্যাটফর্মগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। টিটিপি-র পরিচালক কেটি পল বলেন, “বিশেষ করে নারীদের জন্য উবারের মতো পরিষেবাগুলো নিরাপদ মনে হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, এখানে কে গাড়ি চালাচ্ছেন বা খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন, সেই সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়।
কিন্তু যদি সেই নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের যৌক্তিকতা কী?”
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এসব ভুয়া অ্যাকাউন্টের কারণে ব্যবহারকারীরা অপরিচিত চালক বা ডেলিভারি কর্মীদের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘটনায় জানা যায়, উবার ইটস-এর মাধ্যমে খাবার অর্ডার করার পর এক ব্যক্তি ডেলিভারি দিতে গিয়ে এক নারীর ওপর যৌন নির্যাতনের চেষ্টা করে।
এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে রাইড-শেয়ারিং এবং ডেলিভারি পরিষেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোকে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে, উবার জানিয়েছে, তারা তাদের প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তা রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং অ্যাকাউন্ট শেয়ারিং বা অন্য কোনো ধরনের প্রতারণা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়।
সম্প্রতি, তারা ড্রাইভারদের পরিচয় যাচাই করার জন্য সেলফি যাচাইকরণ এবং অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেছে।
ডেলিভারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার কথা জানিয়েছে। তারা নিয়মিতভাবে তাদের কর্মীদের পরিচয় যাচাই করে এবং ভুয়া অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
অন্যদিকে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, তারা তাদের নীতি লঙ্ঘন করে এমন বিষয়গুলো সরিয়ে দেবে। টিটিপি-র মতে, ফেসবুকের উচিত এইসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট কেনাবেচার বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
তাদের মতে, শুধু স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির ওপর নির্ভর না করে, এইসব বিষয়গুলোতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের নজরদারি বাড়ানো উচিত।
বর্তমানে, বাংলাদেশেও পাঠাও, উবারের মতো রাইড-শেয়ারিং এবং ফুড ডেলিভারি সার্ভিস বেশ জনপ্রিয়। তাই, ব্যবহারকারীদের সচেতন হওয়া জরুরি।
অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এবং সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে, ব্যবহারকারীরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন।
তথ্যসূত্র: CNN