ফিলিস্তিনের বেথলেহেম: পর্যটন সংকটে দিশেহারা কারিগররা।
ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি বেথলেহেম, যা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে এক বিশেষ স্থান, সেখানে চলছে এক গভীর সংকট। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে পর্যটকদের আগমন কমে যাওয়ায় চরম আর্থিক দুর্দশার শিকার এখানকার কারিগররা। ইস্টার উৎসবে সাধারণত এই শহরটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকে, কিন্তু এবার সেই চেনা ছবিটা নেই।
বেথলেহেমের অর্থনীতির একটি প্রধান চালিকাশক্তি হলো পর্যটন। এখানকার কারিগররা মূলত তাদের হস্তনির্মিত জিনিস, যেমন জলপাই কাঠের কারুকার্য করা ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মূর্তি ও অন্যান্য স্মৃতিচিহ্ন বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু পর্যটকদের অভাবে তাদের ব্যবসা প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। কারিগর আত্তালাহ জাকারিয়ার মতে, পর্যটন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের কাজ নেই বললেই চলে। তার পারিবারিক কর্মশালা, যা ১৯৬০ সাল থেকে এখানে চলছে, কর্মী সংখ্যা ২৫ থেকে কমিয়ে বর্তমানে ১০ জনে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে।
অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণও ব্যাপক। জাকারিয়ার হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধের কারণে তার ব্যবসার ৭৫ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। এখানকার মেয়র আন্তন সালমান জানিয়েছেন, বেথলেহেমের আয়ের ৭০ শতাংশ আসে পর্যটন থেকে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, কারিগররা এখন তাদের তৈরি করা পণ্য বিক্রির জন্য মুখিয়ে আছেন।
শুধু পর্যটন সংকটই নয়, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও একটি উদ্বেগের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের কারণে তাদের রপ্তানি বাণিজ্যও হুমকির মুখে। এই শুল্ক আরোপ করা হলে, কারিগরদের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়াতে হবে, যা তাদের ব্যবসার জন্য আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করবে।
আরেকজন কারিগর বাসেম জিয়াকামানের মতে, এই শুল্ক আরোপ হলে ব্যবসার প্রতিটি ক্ষেত্রে ক্ষতি হবে। এমনকি তার তৈরি করা একটি কাঠের ক্রুশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে পৌঁছেছিল। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা তাদের সংকটে কোনো সুরাহা দিতে পারছে না।
গাজায় যুদ্ধ বন্ধ না হওয়ায় ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে পর্যটকদের আগমন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এর ফলে ফিলিস্তিনের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা গত এক বছরে প্রায় ২৫ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। বেথলেহেমের কারিগররা তাদের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এবং এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য এখন কঠিন লড়াই করছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা