বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় চিপ নির্মাতা কোম্পানি এনভিডিয়া (Nvidia) আগামী চার বছরে আমেরিকায় প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। মূলত, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য শুল্কনীতির কারণে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বিশাল বিনিয়োগের ফলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক অবকাঠামো তৈরি হবে, যা প্রযুক্তি বিশ্বে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই বিনিয়োগ পরিকল্পনার পেছনে মূল কারণ হলো, তাইওয়ানে উৎপাদিত সেমিকন্ডাক্টর বা চিপের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের হুমকি। এনভিডিয়ার প্রধান নির্বাহী জেনসেন হুয়াং সম্প্রতি ট্রাম্পের মার-এ-লাগো রিসোর্টে নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলেন। এর পরই এই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসে।
এনভিডিয়া কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, এই বিনিয়োগের ফলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেই সুপার কম্পিউটার তৈরি করতে পারবে। এর মাধ্যমে এআই চিপ ও সুপার কম্পিউটারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে সরবরাহ শৃঙ্খল আরও শক্তিশালী হবে এবং বাজারের অস্থিরতা মোকাবিলা সহজ হবে।
বর্তমানে, এনভিডিয়ার জনপ্রিয় ব্ল্যাকওয়েল গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিটের উৎপাদন কাজ চলছে অ্যারিজোনার ফিনিক্সে অবস্থিত তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির (টিএসএমসি) কারখানায়। এছাড়া, টেক্সাসের হিউস্টনে ফক্সকন এবং ডালাসে উইস্ট্রন-এর সঙ্গে নতুন কারখানা তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। আগামী ১২ থেকে ১৫ মাসের মধ্যে এই কারখানাগুলোতে ব্যাপক উৎপাদন শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এনভিডিয়ার এই সিদ্ধান্ত ‘ট্রাম্পের ফল’ (The Trump Effect)।
এআই চিপের ব্যাপক চাহিদার কারণে এনভিডিয়ার শেয়ারের মূল্য ২০২০ সাল থেকে ১,০০০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু শুল্ক আরোপের অনিশ্চয়তার কারণে চলতি বছর কোম্পানির বাজার মূল্যে কয়েকশ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে, যেখানে শেয়ারের দাম প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে।
এদিকে, ট্রাম্প এখনও সেমিকন্ডাক্টর ও ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। মঙ্গলবার, মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ চিপ ও ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের আমদানি দেশের জাতীয় নিরাপত্তা কিভাবে প্রভাবিত করে, সে বিষয়ে একটি তদন্ত শুরু করেছে। যদিও গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ১০ শতাংশ শুল্ক থেকে ফার্মাসিউটিক্যালস ও চিপকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বের অন্যান্য শেয়ার বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। জাপানের নিক্কেই সূচক ০.৮ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি ০.৯ শতাংশ বেড়েছে। তবে, হংকংয়ের হ্যাং সেং ০.১৬ শতাংশ এবং চীনের বাজার সামান্য কমেছে। ইউরোপের বাজারেও ধীরে ধীরে উন্নতি দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনভিডিয়ার এই বিশাল বিনিয়োগ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর ফলে এআই প্রযুক্তির উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং এআই নির্ভর বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বাড়বে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান