যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি বিশাল জলাভূমি, ওকফেনোকি সোয়াম্প (Okefenokee Swamp), সম্ভবত খুব শীঘ্রই ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে।
বিশাল এই জলাভূমিটি শুধু একটি প্রাকৃতিক বিস্ময়ই নয়, বরং জীববৈচিত্র্যের এক অনন্য স্থান হিসেবেও সুপরিচিত। বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য এই স্থানটি সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো।
ওকফেনোকি সোয়াম্প, যা “ভূমি যা কাঁপছে” নামে পরিচিত, প্রায় ৪৩৮,০০০ একর (১,৭৭৩ বর্গকিলোমিটার) জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এটি উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম কৃষ্ণ জলের জলাভূমি (কৃষ্ণ জলের জলাভূমি বলতে এমন জলাভূমিকে বোঝায় যেখানে পানির রঙ গাঢ় হয়, যা পচনশীল উদ্ভিদ থেকে আসে)।
এখানে প্রায় ১৫,০০০ কুমির বাস করে, যা এটিকে কুমিরের আবাসস্থল হিসেবেও উল্লেখযোগ্য করে তোলে। এছাড়াও, বিরল প্রজাতির অনেক প্রাণী, যেমন— ইন্ডিকো সাপ এবং কাঠঠোকরা পাখিরও এখানে বসবাস।
ঐতিহাসিক দিক থেকেও ওকফেনোকির গুরুত্ব রয়েছে। একসময় এখানকার আদিবাসী লোকেরা এই অঞ্চলে বসবাস করত। এরপর এখানে লগিং শিল্প গড়ে ওঠে এবং জলাভূমিটিকে শুকিয়ে ফেলারও চেষ্টা করা হয়েছিল।
তবে, ১৯৩৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট এই স্থানটিকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করেন। এরপর থেকে এটিকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে, ওকফেনোকি সোয়াম্প একটি জাতীয় বন্যপ্রাণী আশ্রয়কেন্দ্র এবং একটি রাজ্য উদ্যান হিসেবে সংরক্ষিত। এখানে ভ্রমণের জন্য জনপ্রতি ৫ মার্কিন ডলার (প্রায় ৫৫০ টাকা, যা বিনিময় হারের উপর নির্ভরশীল) প্রবেশ ফি লাগে।
বর্তমানে এটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানের স্বীকৃতি লাভের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। যদি এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায়, তবে এই অঞ্চলের পর্যটন আরও বাড়বে এবং এর ফলে এখানকার পরিবেশ রক্ষার কাজটি আরও সহজ হবে।
ওকফেনোকি সোয়াম্পে ভ্রমণের জন্য কয়েকটি প্রবেশপথ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত স্থানগুলো হলো— ফোরগো-র স্টিফেন সি. ফস্টার স্টেট পার্ক, ফোকস্টন এবং ওয়েক্রস।
এখানে বোট ট্যুর, হাইকিং এবং সাইকেলিংয়েরও সুযোগ রয়েছে। যারা প্রকৃতি ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই স্থানটি একটি আদর্শ জায়গা।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলে (Jacksonville) এখানকার নিকটতম বিমানবন্দর অবস্থিত, যা সড়ক পথে প্রায় ২ ঘণ্টার দূরত্বে। আর আটলান্টা বিমানবন্দর এখান থেকে প্রায় ৫ ঘণ্টা দূরে অবস্থিত।
এখানে আসার জন্য গাড়ির প্রয়োজন।
বর্ষাকালে এখানকার আবহাওয়া বেশ গরম এবং আর্দ্র থাকে। তাই শরৎ এবং বসন্তকাল ভ্রমণের জন্য সেরা সময়।
শীতকালে এখানে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়, যেখানে স্থানীয় সংস্কৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে জানার সুযোগ থাকে।
ওকফেনোকি সোয়াম্পে বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য এখানকার প্রধান আকর্ষণগুলো হলো— বোট ট্যুর, যেখানে কুমির এবং বিভিন্ন জলচর প্রাণী দেখা যায়। এছাড়াও, এখানে রয়েছে বিশেষ কিছু হাইকিং ট্রেইল ও ঐতিহাসিক স্থান, যা ভ্রমণার্থীদের আকৃষ্ট করে।
এখানে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। স্টিফেন সি. ফস্টার স্টেট পার্কে ক্যাম্পিং এবং কটেজের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া, ফোকস্টন ও ওয়েক্রসে সাধারণ মানের হোটেল এবং ভাড়াও পাওয়া যায়।
খাবারের জন্য কাছাকাছি শহরগুলোতে যেতে পারেন, যেখানে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফেতে স্থানীয় খাবার উপভোগ করা যেতে পারে।
ওকফেনোকি সোয়াম্প, জীববৈচিত্র্যের এক অসাধারণ স্থান। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব একে একটি বিশেষ স্থানে পরিণত করেছে।
এই স্থানটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে, এর সংরক্ষণ আরও সহজ হবে এবং বিশ্বজুড়ে প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে এর পরিচিতি আরও বাড়বে।
বাংলাদেশের সুন্দরবনের মতো, ওকফেনোকি সোয়াম্পও একটি গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি। উভয় স্থানই জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি।
বিশ্বজুড়ে জলাভূমিগুলোর সংরক্ষণ জরুরি, কারণ এগুলো পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লিজার