যুক্তরাষ্ট্রে চীন থেকে আসা জাহাজগুলোর উপর নতুন করে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো, দেশটির জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে চীনের একচেটিয়া আধিপত্য থেকে রক্ষা করা।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিসের (United States Trade Representative – USTR) পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, এই নতুন শুল্ক চীন কর্তৃক নির্মিত ও চীনা মালিকানাধীন জাহাজগুলোর ওপর ধার্য করা হবে। জাহাজের নেট টনেজ অথবা প্রতিটি সমুদ্রযাত্রায় বহন করা পণ্যের ওপর ভিত্তি করে এই শুল্ক নির্ধারণ করা হবে।
এই পদক্ষেপের ফলে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী ১৮০ দিনের মধ্যে এই নতুন শুল্ক কার্যকর করা হবে এবং ধীরে ধীরে তা বাড়ানো হবে।
সূত্রমতে, প্রথমে চীন কর্তৃক নির্মিত ও মালিকানাধীন জাহাজের ক্ষেত্রে প্রতি নেট টনে ৫০ মার্কিন ডলার (প্রায় ৪,৫০০ টাকা) শুল্ক ধার্য করা হবে। এরপর, প্রতি বছর এই শুল্ক ৩০ ডলার করে বাড়ানো হবে, যা তিন বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
বিকল্প হিসেবে, প্রতিটি কন্টেইনার খালাসের জন্য ১২০ ডলার (প্রায় ১০,৮০০ টাকা) শুল্ক ধার্য করা হতে পারে, যা তিন বছর পর ২৫০ ডলারে (প্রায় ২২,৫০০ টাকা) গিয়ে পৌঁছবে। এই দুই পদ্ধতির মধ্যে যেটি বেশি হবে, সেটিই প্রযোজ্য হবে।
অন্যদিকে, চীনা কোম্পানি কর্তৃক নির্মিত, কিন্তু অন্য কোনো দেশের মালিকানাধীন জাহাজের ক্ষেত্রে প্রতি নেট টনে ১৮ ডলার (প্রায় ১,৬২০ টাকা) শুল্ক ধার্য করা হবে। এই শুল্কও প্রতি বছর ৫ ডলার করে বাড়ানো হবে।
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জ্যামিসন গ্রিয়ার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “জাহাজ এবং নৌ-পরিবহন, আমেরিকার অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যের অবাধ প্রবাহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
এই পদক্ষেপের ফলে, বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
এর আগে, চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। জবাবে, চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
তবে, সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্কের এই বৃদ্ধি বন্ধ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা ডেকে আনতে পারে এবং এর ফলস্বরূপ ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে।
ছোট অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্যও এই ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধ উদ্বেগের কারণ হতে পারে, কারণ এতে আমদানি ও রপ্তানির খরচ বাড়তে পারে এবং বিশ্ব বাজারে বাণিজ্যের ধারা পরিবর্তন হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন