চীনের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা, ট্রাম্পের শুল্কের কারণে কারখানায় উৎপাদন কমছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চীনের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উচ্চ শুল্কের কারণে দেশটির কারখানায় উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। এপ্রিল মাসে চীনের কারখানাগুলোতে উৎপাদন গত ১৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর (National Bureau of Statistics – NBS) তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স (PMI) দাঁড়িয়েছে ৪৯.০ তে। যা ডিসেম্বর ২০২৩ এর পর সর্বনিম্ন।
পিএমআই সূচক ৫০ এর নিচে নামলে, এটিকে উৎপাদন হ্রাস হিসেবে ধরা হয়।
এনবিএস-এর একজন শীর্ষস্থানীয় পরিসংখ্যানবিদ ঝাও কিংহে এক বিবৃতিতে জানান, কারখানার উৎপাদন হ্রাসের মূল কারণ হলো “বৈশ্বিক পরিস্থিতির আকস্মিক পরিবর্তন এবং অন্যান্য বিষয়।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের চীনের পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে দেশটির রপ্তানি এবং উৎপাদন নির্ভর অর্থনীতিতে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। গত মাসেই চীনা উৎপাদকরা এই বিশাল শুল্কের প্রভাব অনুভব করতে শুরু করে, কারণ অনেক অর্ডার বাতিল হয়েছে এবং উৎপাদনও কমাতে হয়েছে।
এর ফলে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। চীনের শীর্ষ নেতারা বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে দৃঢ় ও আত্মবিশ্বাসী অবস্থান বজায় রাখতে চেষ্টা করছেন।
এমন পরিস্থিতিতে এপ্রিল মাসের এই তথ্য বেইজিংয়ের জন্য একটি বড় ধাক্কা। কারণ, চীনের অর্থনীতি এরই মধ্যে দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং দীর্ঘায়িত আবাসন সংকট মোকাবিলা করছে।
যদিও পরিষেবা এবং নির্মাণ খাতে সামান্য অগ্রগতি দেখা গেছে, কিন্তু এপ্রিলের এই পরিসংখ্যান একটি খারাপ ইঙ্গিত দেয়। নতুন রপ্তানি আদেশের সূচকও কমে ৪৪.৭-এ দাঁড়িয়েছে, যা কোভিড-১৯ মহামারীর সময়কালের পর সর্বনিম্ন।
মরগান স্ট্যানলির প্রধান চীন অর্থনীতিবিদ রবিন সিং এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, পিএমআই-এর এই পতন শুল্কের প্রভাবের প্রমাণ, যা বহির্বিশ্বে চাহিদার দুর্বলতা তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, “আমরা মনে করি, শুল্কের প্রভাব চলতি ত্রৈমাসিকে সবচেয়ে বেশি অনুভূত হবে, কারণ অনেক রপ্তানিকারক উচ্চ শুল্কের অনিশ্চয়তার কারণে যুক্তরাষ্ট্রগামী তাদের উৎপাদন ও চালান বন্ধ করে দিয়েছে।
সামগ্রিকভাবে, নীতি কাঠামো এখনো প্রতিক্রিয়াশীল এবং সরবরাহ-কেন্দ্রিক, যা শুল্কের ধাক্কা মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়।” বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, চীনের সরকার আগামী মাসগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে আর্থিক ও মুদ্রানীতিকে আরও জোরদার করবে।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেইজিং গত বছরের শেষ দিক থেকে কিছু পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে, যার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলোর জন্য ঋণের সহজলভ্যতা এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর পদক্ষেপ অন্যতম।
তবে, কর্মকর্তারা এখনো ব্যাপকভিত্তিক কোনো উদ্দীপনা প্যাকেজ ঘোষণা করেননি। তারা বরং নির্দিষ্ট কিছু খাতে সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা মূলত ভোগ বৃদ্ধি এবং রপ্তানিকারকদের ওপর চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা। চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ঝাও চেনসিন এক সরকারি সংবাদ সম্মেলনে জানান, বেইজিংয়ের কাছে অর্থনৈতিক চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত নীতিগত মজুদ রয়েছে এবং তারা ইতিমধ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করবে।
অন্যদিকে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির মুখে নমনীয় হওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির মুখে নমনীয়তা দেখালে তারা আরও আগ্রাসী হয়ে উঠবে।” রিও ডি জেনিরোতে এক বৈঠকের পাশে দেওয়া তাঁর এই মন্তব্য, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমেরিকার “গুণ্ডা” নেতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য তাঁর মন্ত্রকের দেওয়া একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিওর প্রতিধ্বনি ছিল।
গত মঙ্গলবার প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, চীন ১৪৫ শতাংশ শুল্ক পাওয়ার যোগ্য, এবং বেইজিংকেই এই শুল্কের বোঝা বহন করতে হবে।
ট্রাম্প এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “সম্ভবত চীনকেই এই শুল্কের বোঝা বহন করতে হবে। তবে ১৪৫ শতাংশ শুল্কের কারণে তারা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেশি ব্যবসা করতে পারবে না।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন