ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ, কী হতে পারে পরিণতি?
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, তিনি একটি আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছেন, যার ফলস্বরূপ তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। মূলত, ভেনেজুয়েলার কিছু নাগরিককে, যাদের বিরুদ্ধে গ্যাং সদস্যতার অভিযোগ ছিল, তাঁদেরকে বিতাড়িত করার বিষয়ে আদালতের একটি নির্দেশের লঙ্ঘন হয়েছে।
এই ঘটনায় বিচারক ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন বিচারক জেমস বোয়াসবার্গ একটি নির্দেশ জারি করেন, যাতে বিতর্কিত ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের বিতাড়ন বন্ধ করতে বলা হয়। এই বিতাড়ন প্রক্রিয়া বন্ধের কারণ ছিল, বিতাড়িত হওয়া ব্যক্তিরা যাতে তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করতে পারেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বিচারকের এই নির্দেশ অমান্য করে তড়িঘড়ি করে তাঁদের এল সালভাদরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারক বোয়াসবার্গ বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছে। তিনি বলেছেন, “সংবিধান বিচার বিভাগের আদেশকে ইচ্ছাকৃতভাবে অমান্য করা সহ্য করে না – বিশেষ করে অন্য একটি শাখার কর্মকর্তাদের দ্বারা, যারা তা সমুন্নত রাখার শপথ নিয়েছেন।
আদালত অবমাননা কী?
আদালত অবমাননা হলো আদালতের নির্দেশ ইচ্ছাকৃতভাবে অমান্য করা। এটি দুই ধরনের হতে পারে: দেওয়ানি আদালত অবমাননা এবং ফৌজদারি আদালত অবমাননা। দেওয়ানি আদালত অবমাননা হলো যখন কেউ আদালতের আদেশ পালন করতে ব্যর্থ হয় বা আদালতের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায়। ফৌজদারি আদালত অবমাননা হলো যখন কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতের আদেশকে অসম্মান করে।
ফৌজদারি আদালত অবমাননার ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির জরিমানা হতে পারে, কারাদণ্ড হতে পারে, অথবা উভয়ই হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে, আদালত অবমাননার জন্য ১০০০ ডলার পর্যন্ত জরিমানা এবং ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্প অবশ্য এই অভিযোগকে অস্বীকার করেছেন এবং বিচারকের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বিচারককে ‘বামপন্থী উন্মাদ’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং তাঁর অপসারণের দাবি জানান। তবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস বলেছেন, বিচারিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা হলে, তার প্রতিকার হিসেবে অভিশংসন (Impeachment) উপযুক্ত নয়।
আইনজীবীরা বলছেন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হলে, তা অভিশংসনেরও কারণ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ও দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো, প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, দেশের আইনগুলো যথাযথভাবে কার্যকর করা হচ্ছে।
আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপ
বিচারক বোয়াসবার্গ ট্রাম্প প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন, বিতাড়িত হওয়া ব্যক্তিদের আইনি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে, বিতাড়ন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে জড়িত কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে বলেছেন, যাতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
মামলার ভবিষ্যৎ
এই মামলার ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে। আপিলের প্রক্রিয়া সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন ঘটনা নতুন নয়। অতীতেও অনেক প্রেসিডেন্ট আদালতের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন গৃহযুদ্ধের শুরুতে কিছু ক্ষেত্রে আদালতের রায়কে উপেক্ষা করেছিলেন। আবার, প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির সময় আদালতের কাছে তথ্য গোপন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে নতি স্বীকার করতে হয়েছিল।
বর্তমানে, এই মামলার চূড়ান্ত পরিণতি কী হবে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে, এটি স্পষ্ট যে, আদালত অবমাননার অভিযোগ প্রমাণ হলে ট্রাম্পের জন্য গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা