ডলারের দর পতন: উদ্বেগে বিশ্ব অর্থনীতি, কতটা ঝুঁকিতে যুক্তরাষ্ট্র?
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মার্কিন ডলারের আধিপত্য নিয়ে অনেক দিন ধরেই আলোচনা চলছে। কিন্তু সম্প্রতি ডলারের দামে যে পতন দেখা যাচ্ছে, তা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে কাজ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিশ্বজুড়ে আস্থা কমার বিষয়টি।
বিশেষ করে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি এবং ফেডারেল রিজার্ভের (যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক) প্রতি তার মনোভাবের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দুর্বল হয়ে যেতে পারে, যা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ।
জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে অন্যান্য প্রধান মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দর প্রায় ৯ শতাংশ কমে গেছে। এই পতনকে নজিরবিহীন বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
সাধারণত, কোনো দেশের মুদ্রার মান কমে গেলে সেই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সুবিধা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। বরং, বাণিজ্য যুদ্ধ এবং শুল্ক আরোপের মতো পদক্ষেপগুলো ডলারের দর আরও কমিয়ে দিয়েছে।
ডলারের এই দর পতনের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন বিষয়কে চিহ্নিত করছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো, ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা। শুল্ক আরোপের ফলে অনেক বিদেশি পণ্যের দাম বাড়ছে, যা ভোক্তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
এছাড়া, ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। কেউ কেউ মনে করেন, মূল্যস্ফীতি বাড়লে ডলারের চাহিদা কমে যেতে পারে, কারণ বিনিয়োগকারীরা তখন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য অন্য কোনো মুদ্রার দিকে ঝুঁকবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য ডলারের দুর্বল হওয়াটা বেশ উদ্বেগের। কারণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের ব্যবহার অনেক বেশি।
এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বিদেশি মুদ্রা ব্যবহার করতে গিয়ে ক্ষতির শিকার হতে পারেন। এছাড়া, মার্কিন সরকারের ঋণ পরিশোধের খরচও বাড়তে পারে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রায় ১২০ শতাংশ ঋণ রয়েছে, যা একটি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
এই পরিস্থিতিতে চীনের মতো দেশগুলো বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। চীন ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ইউয়ান-ভিত্তিক বাণিজ্য চুক্তি করতে শুরু করেছে। এমনকি, কিছু দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তারা ইউয়ানে ঋণও দিচ্ছে।
এছাড়াও, ডিজিটাল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সিও ডলারের বিকল্প হিসেবে উঠে আসতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারের দর পতনের কারণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ওপরও প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রা।
ডলার দুর্বল হলে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে দেবে। এছাড়া, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশকে বাড়তি চাপ নিতে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, কিভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়। কারণ, ডলারের দুর্বলতা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে দুর্বল করবে না, বরং বিশ্ব অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে, যা ডলারের দর পতনের অন্যতম কারণ।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস