বৈদেশিক বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন মোড় নিতে পারে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন রূপ নিতে পারে।
একদিকে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে, তেমনই বিভিন্ন দেশ নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের চিরাচরিত ধারণা বদলে দিচ্ছে। এর মূল কারণ হলো, ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করেছেন।
এর ফলে অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করতে দ্বিধা বোধ করছে। বিশেষ করে, চীন, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মতো শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোটগুলো বিকল্প বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলার দিকে ঝুঁকছে।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হতে পারে, কিন্তু চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বর্তমানে অনেক শক্তিশালী। বিশ্ব ব্যাংক এর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি প্রায় ৩০ ট্রিলিয়ন ডলার, যেখানে চীনের জিডিপি ১৮ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতি প্রায় ১৯ ট্রিলিয়ন ডলারের। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো-ইওয়েলা বলেছেন, বিশ্ব বাণিজ্যের মাত্র ১৩ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হয়ে থাকে।
বাকি ৮৭ শতাংশ বাণিজ্য হয় ডব্লিউটিও’র অন্যান্য সদস্য দেশগুলোর মধ্যে।
ট্রাম্প প্রায়ই অভিযোগ করেন যে অন্যান্য দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে ঠকাচ্ছে। এর প্রতিকার হিসেবে তিনি বিভিন্ন পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেছেন।
এর মধ্যে রয়েছে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক, মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আসা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক, চীনের পণ্য আমদানির ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক এবং গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপরও আলাদা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই নীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ। মুডি’স রেটিং-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুল্ক নীতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে।
এছাড়াও, নীতির অসামঞ্জস্যপূর্ণতার কারণে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে।
এই পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন দেশ তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে শুরু করেছে। চীন এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করছে।
দেশটির পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে চীনের মোট রপ্তানির ১৯.২ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে গেলেও, বর্তমানে তা কমে ১৪.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে চাইছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেইন বলেছেন, অনেক দেশ এখন ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহী।
যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য নীতির ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব পড়বে, তা এখন দেখার বিষয়। বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এর কিছু প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন