চীনের তৈরি হিউম্যানয়েড রোবটগুলো মানুষের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল, কিন্তু তারা হেরে গেছে। শনিবার চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বের প্রথম হিউম্যানয়েড হাফ-ম্যারাথন।
এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন আকারের ২০টির বেশি রোবট অংশ নেয়। প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রযুক্তির দিক থেকে চীনের অগ্রগতি তুলে ধরা।
এই ধরনের প্রযুক্তি তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্র এখনো এগিয়ে থাকলেও চীনও পিছিয়ে নেই, তা প্রমাণ করাই ছিল লক্ষ্য। বিভিন্ন কোম্পানি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী রোবটগুলো বেইজিংয়ের ইজুয়াং জেলার রাস্তায় দৌড় শুরু করে। এই এলাকাটি প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
গত কয়েক মাসে চীনের হিউম্যানয়েড রোবটগুলোর বাইক চালানো, লাথি মারা এবং উল্টো দিকে শরীর ঘোরানোর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। চীন সরকারও এই ধরনের প্রযুক্তিকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচনা করছে।
চীন সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে হিউম্যানয়েড রোবট তৈরির ব্যাপক উৎপাদন শুরু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি নীতি নথিতে, দেশটির শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় হিউম্যানয়েড রোবোটিক্স শিল্পকে “প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতার নতুন ক্ষেত্র” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
প্রতিযোগিতায় মানুষের সঙ্গে রোবটদের দৌড়ানোর বিষয়টি অনেকের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। মানুষের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবট একদিন হয়তো মানুষকেও ছাড়িয়ে যাবে।
তবে এই দৌড় প্রতিযোগিতায় মানুষের জয় প্রমাণ করে, দৌড়ের মতো শারীরিক কর্মকাণ্ডে এখনো মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় আছে।
প্রায় ২১ কিলোমিটার (১৩ মাইল) পথ অতিক্রম করতে রোবটগুলোর সঙ্গে ১২,০০০ জন মানুষও দৌড়ে অংশ নেয়। দৌড়ের সময় রোবটগুলোকে ব্যাটারি পরিবর্তন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
কোনো রোবট অচল হয়ে গেলে, দলগুলো তাদের রোবট পরিবর্তন করতে পারতো, তবে এর জন্য ১০ মিনিটের অতিরিক্ত সময় যোগ করা হতো।
বেইজিং হিউম্যানয়েড রোবট ইনোভেশন সেন্টার তৈরি করা ‘তিয়াংগং আলট্রা’ নামের একটি রোবট ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিটে দৌড় শেষ করে প্রথম স্থান অধিকার করে। যদিও এটি মানুষের বিশ্ব রেকর্ড থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল।
এই প্রতিযোগিতায় মানুষের মধ্যে বিজয়ী ১ ঘণ্টা ২ মিনিটে দৌড় শেষ করেন।
এই রোবটটির নির্মাতা দলের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা টাং জিয়ান জানান, তিয়াংগং আলট্রা-র দীর্ঘ পা এবং মানুষের মতো দৌড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে। দৌড়ের সময় রোবটটিকে কয়েকবার ব্যাটারি পরিবর্তন করতে হয়েছে।
এছাড়া, পরে যাওয়া থেকে বাঁচাতে এর সঙ্গে একজন সাহায্যকারীও ছিলেন।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগ রোবটকেই এই ধরনের সহায়তার প্রয়োজন হয়েছে। কিছু রোবটকে দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল, আবার কিছু রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল।
তবে সাধারণ মানুষজন কোনো অসুবিধা ছাড়াই রোবটগুলোর সঙ্গে দৌড়াতে পেরেছে, যা প্রযুক্তি বিশ্বে নতুন দিগন্তের সূচনা করে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন