ভবিষ্যতের সুরক্ষা: বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য উত্তরাধিকার পরিকল্পনা
প্রায়শই শোনা যায়, মা-বাবা তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চান। কিন্তু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ক্ষেত্রে এই চিন্তা আরও গভীর হয়।
তাঁদের ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পরিকল্পনা করাটা অত্যন্ত জরুরি। সম্প্রতি, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন একজন মা ও অভিজ্ঞ ফিনান্সিয়াল অ্যাডভাইজার।
তিনি তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে জানিয়েছেন কীভাবে একটি ভুল উইল-এর কারণে তাঁর বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারতো।
ছেলে অটিজম-এ আক্রান্ত হওয়ার পর, এই মা-বাবা তাঁদের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবেছিলেন। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তারা যখন উইল তৈরি করতে যান, তখন বুঝতে পারেন, সাধারণ উইল-এর মাধ্যমে উত্তরাধিকার প্রদান করলে অনেক সমস্যা হতে পারে।
কারণ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা থাকে। তাঁদের আর্থিক সক্ষমতা কম থাকতে পারে, ফলে অর্থের সঠিক ব্যবহার নাও হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে, বিশেষ ট্রাস্ট বা পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।
এই মা, যিনি পেশায় একজন চার্টার্ড ফিনান্সিয়াল অ্যাডভাইজার, তাঁর ছেলের জন্য সঠিক পরিকল্পনা করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছেন। তিনি জানতে পারেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য ‘ডিজেবলড পারসনস ট্রাস্ট’ (Disabled Person’s Trust) ও ‘ডিসক্রেশনারি ট্রাস্ট’ (Discretionary Trust) -এর মতো বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।
এই ধরনের ট্রাস্ট-এর মাধ্যমে, উত্তরাধিকারের অর্থ সরাসরি সন্তানের হাতে না দিয়ে, ট্রাস্টিদের তত্ত্বাবধানে রাখা যায়। ট্রাস্টিরা সন্তানের প্রয়োজন অনুযায়ী সেই অর্থ খরচ করেন, যা তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
উত্তরাধিকার পরিকল্পনার পাশাপাশি, ‘লেটার অফ উইশেস’ (Letter of Wishes) তৈরি করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।
এটি একটি নথিপত্র, যেখানে সন্তানের জন্য মা-বাবার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও ইচ্ছের কথা উল্লেখ করা হয়। যদিও এটি সরাসরি আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করে না, তবুও এটি ট্রাস্টিদের জন্য একটি দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য সঠিক উত্তরাধিকার পরিকল্পনা না থাকলে, অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। যেমন, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে জটিলতা, সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়া ইত্যাদি।
তাই, এই ধরনের পরিবারগুলোর জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।
বাংলাদেশেও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের দেখাশোনা এবং তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য পরিবারের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সহায়তা কার্যক্রম আরও বাড়ানো উচিত। এই ধরনের শিশুদের জন্য আর্থিক, সামাজিক এবং স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য উত্তরাধিকার পরিকল্পনা করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে।
মনে রাখবেন, সঠিক পরিকল্পনা আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। তাই, দেরি না করে আজই আপনার সন্তানের জন্য একটি উপযুক্ত উত্তরাধিকার পরিকল্পনা তৈরি করুন।
(দয়া করে মনে রাখবেন, এই নিবন্ধে দেওয়া তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের উদ্দেশ্যে। কোনো আইনি বা আর্থিক পরামর্শের জন্য, উপযুক্ত পেশাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।)
তথ্য সূত্র: The Guardian