মহাকাশে জীবনের এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা: নভোচারীর চোখে পৃথিবী ও তার সৌন্দর্য
মহাকাশ একটি বিশাল, অচেনা জগৎ, যা সবসময়ই মানুষের কল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। নাসার অভিজ্ঞ নভোচারী ডন পেটিট, যিনি চারবার মহাকাশে পাড়ি জমিয়েছেন, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (International Space Station – ISS) থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আসছে রবিবার তার ৭০তম জন্মদিন।
ডন পেটিট শুধু একজন নভোচারীই নন, তিনি একজন উদ্ভাবকও বটে। তিনিই প্রথম মহাকাশে ব্যবহারের উপযোগী একটি বিশেষ কাপ তৈরি করেছেন, যার নাম ‘ক্যাপিলারি বেভারেজ’ বা ‘স্পেস কাপ’। এই কাপের মাধ্যমে শূন্য মাধ্যাকর্ষণ অবস্থায়ও সহজে পান করা সম্ভব। এছাড়াও, তিনি একজন খ্যাতিমান অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার, যিনি মহাকাশ থেকে তোলা ছবিগুলোর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।
তার ক্যামেরার লেন্সবন্দী হয়েছে মহাকাশের নানা রূপ, যা আমাদের বিস্মিত করে তোলে।
সম্প্রতি, বিশ্বখ্যাত পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী নীল ডিগ্রাস টাইসনের সাথে এক সাক্ষাৎকারে ডন পেটিট তার ছবি তোলার পেছনের গল্প বলেছেন। তিনি বলেন, “আমার অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফির মূল উদ্দেশ্য হল, পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ভিন্ন একটি দৃষ্টিকোণ থেকে ছবি তোলা। যেখানে পৃথিবীর দিগন্ত এবং বায়ুমণ্ডলের প্রান্ত স্পষ্টভাবে দেখা যায়, এবং তার সাথে মহাকাশের বিভিন্ন জ্যোতিষ্ক, যেমন – নক্ষত্র বা গ্যালাক্সিগুলোকে ছবিতে ফুটিয়ে তোলা হয়।”
ডন পেটিটের মতে, মহাকাশ থেকে পৃথিবীর সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। তিনি বলেন, “পৃথিবীতে যখন আমাদের পা থাকে, তখনও এর সৌন্দর্য অসাধারণ, আবার মহাকাশ থেকেও একে চমৎকার লাগে। আসলে, কোনটি বেশি সুন্দর, তা বলা কঠিন। সম্ভবত, মহাকাশ আমাদের কাছে এমন একটি সুযোগ তৈরি করে, যেখানে আমরা বিশেষভাবে এই কক্ষপথে থাকার সৌন্দর্য অনুভব করতে পারি। যদি মানুষ সারাজীবন মহাকাশে বাস করত, তাহলে তারা যখন পৃথিবীতে ফিরে আসত, তখন সম্ভবত তাদের কাছে পৃথিবীর দৃশ্যই সবচেয়ে সুন্দর মনে হতো।”
পেটিট তার ছবিগুলো তুলেছেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের একটি বিশেষ স্থান থেকে, যা ‘কুপোলা’ নামে পরিচিত। এই স্থানটি নভোচারীদের কাছে খুবই প্রিয়, কারণ এর সাতটি জানালা দিয়ে পৃথিবীর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়। গত সাত মাসে তোলা তার কিছু অসাধারণ ছবি তুলে ধরা হলো, যা মহাকাশে জীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ধারণা দেয়।
ডন পেটিটের কাজ আমাদের মহাকাশ অনুসন্ধানের গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে। তার তোলা ছবিগুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আমাদের আগ্রহ বাড়ায় এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। আমাদের তরুণ প্রজন্মের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক দিক।
ভবিষ্যতে হয়তো, বাংলাদেশের কোনো নভোচারীও একদিন মহাকাশ থেকে এমন অসাধারণ ছবি তুলবেন, যা আমাদের গর্বিত করবে।
তথ্য সূত্র: CNN