1. rajubdnews@gmail.com : adminb :
  2. babu.repoter@gmail.com : Babu : Nurul Huda Babu
April 30, 2025 2:05 AM

গাজায় হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গল্প: এক শিশুর ভালোবাসায় দুই পরিবারের মিলন!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট হয়েছে : Sunday, April 20, 2025,

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় মায়ের কোল থেকে হারিয়ে যাওয়া এক শিশুর নতুন ঠিকানা খুঁজে পাওয়ার হৃদয়স্পর্শী গল্প। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ধ্বংসস্তূপের মাঝে জন্ম নেওয়া এক শিশুর জীবন, যিনি এক পরিবারের ভালোবাসায় বেড়ে উঠেছিলেন, অবশেষে ফিরে গিয়েছেন নিজের বাবার কাছে।

ডিসেম্বর মাসের এক সকালে, উত্তর গাজার জাবালিয়ায় অবস্থিত আল-রাফেই স্কুলে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর ওপর নেমে আসে ইসরায়েলি বোমারু বিমানের ধ্বংসযজ্ঞ। বোমা হামলায় চারিদিকে যখন আহত এবং নিহত মানুষের আর্তনাদ, ঠিক তখনই এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

ধ্বংসস্তূপের মাঝে, ১৩ মাস বয়সী এক শিশু তার মায়ের নিথর দেহের পাশে বসে অবিরাম কাঁদছিল। সেই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে, দিশেহারা মানুষজন যখন জীবন বাঁচাতে ছুটছিল, তখন শিশুটির বাবা তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

শিশুটির নাম ছিল মোহাম্মদ। বোমা হামলায় তার মা-কে হারানোর পর, মোহাম্মদ নামের এই শিশুটিকে খুঁজে পান রাসেম নাহহান নামের এক ব্যক্তি। রাসেম ও তার পরিবারও তখন উদ্বাস্তু হয়ে ঐ স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বোমার আঘাতে যখন চারপাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, তখন রাসেম শিশুটিকে উদ্ধার করেন।

তিনি জানান, “আমি যখন শিশুটিকে দেখি, তার মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল, আর সে দম নিতে পারছিল না। আমি আশেপাশে থাকা লোকজনকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম, আপনারা কি এই শিশুকে চেনেন? তার মা মারা গেছে। কিন্তু কেউ তাকে চিনতে পারছিল না।

রাসেমের স্ত্রী ফাওয়াকাহ নাহহান, তাদের দুই মেয়ে- ইসলাম এবং আমিনার সঙ্গে শিশুটিকে দেখাশোনা করতে শুরু করেন। তারা শিশুটির নাম রাখেন “হামুদ”। হামুদ নামটি মোহাম্মদ ও আহমেদ- এই দুটি নামের সংক্ষিপ্ত রূপ। যুদ্ধ আর ধ্বংসের মধ্যে হামুদ যেন তাদের পরিবারের নতুন আলো হয়ে আসে।

রাসেম ও ফাওয়াকাহ-র পরিবার হামুদকে সঙ্গে নিয়ে গাজা উপত্যকার দক্ষিণে পালিয়ে যান।

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায়, শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার ও অন্যান্য সামগ্রীর অভাব ছিল প্রকট। ডায়াপারের দাম বেড়ে যাওয়ায়, ফাওয়াকাহ এক রাতে কেবল একটি ডায়াপার পরাতেন হামুদকে। দিনের বেলা কাপড়ের ন্যাপকিন ব্যবহার করতেন, যা তিনি ঘন ঘন পরিবর্তন করতেন।

কঠিন পরিস্থিতিতেও, নাহহান পরিবার হামুদকে ভালোবেসে আগলে রেখেছিল।

হামুদ নাহহান পরিবারের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। প্রতিবেশীরা হামুদের জন্য খাবার পাঠাতেন, আর বলতেন, “ছেলেটির যেন ঠিকমতো খাওয়া হয়।” হামুদ ফাওয়াকাহকে ‘মা’ এবং রাসেমকে ‘বাবা’ ডাকত। ধীরে ধীরে, হামুদ যেন তাদের পরিবারেরই একজন হয়ে ওঠে।

এদিকে, মোহাম্মদকে হারিয়ে তার বাবা তারেক আবু জাবাল এক বছর ধরে ছেলেকে খুঁজে ফিরছিলেন। তিনি বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে গিয়ে তার ছেলের সন্ধান করেন, কিন্তু কোনো খোঁজ পাননি।

এরপর একদিন, টেলিভিশনে প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকারে তিনি রাসেম নাহহানকে দেখতে পান। রাসেম যখন হামুদের গল্প বলছিলেন, তখন তারেক বুঝতে পারেন, এই হাসিখুশি শিশুটি আর কেউ নয়, তার হারিয়ে যাওয়া সন্তান মোহাম্মদ।

পরে, তারেক, তার ছেলে ওমর, এবং আরও কয়েকজন মিলে রাসেমদের খুঁজে বের করেন। যখন তারা মিলিত হন, মোহাম্মদ তার বাবাকে প্রথমে চিনতে পারেনি, তবে ধীরে ধীরে সে তার বাবার কাছে যায়।

নাহহান পরিবার, একদিকে যেমন হামুদকে তার বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে খুশি হয়েছিলেন, তেমনই তাকে হারানোর বেদনায় ছিলেন কাতর।

মনে হচ্ছিল, আমি আমার আত্মার একটি অংশকে বিদায় জানাচ্ছি। সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত ছিল, যখন তারা চলে যাচ্ছিল, আর হামুদ ‘বাবা, বাবা’ বলে কাঁদছিল।”

ফাওয়াকাহ

বর্তমানে, হামুদ তার বাবার কাছে ফিরে গেলেও, নাহহান পরিবারের সঙ্গে তার সম্পর্ক অটুট রয়েছে। তারা এখনও হামুদকে তাদের পরিবারের একজন হিসেবেই ভালোবাসেন।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2019 News 52 Bangla
Theme Customized BY RASHA IT