যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে সোমবার বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েলের প্রতি আক্রমণ এবং বাণিজ্য নিয়ে অনিশ্চয়তা। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থ সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন, যার ফলস্বরূপ ডলারের মানও কমে গেছে।
সোমবার দিনের শুরুতে ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচক প্রায় ৭৫০ পয়েন্ট বা ১.৯ শতাংশ কমে যায়। এছাড়া, এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক ২.১ শতাংশ এবং প্রযুক্তি খাতের সূচক নাসডাক কম্পোজিট প্রায় ২.৬৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়। বিশ্লেষকদের মতে, গত কয়েক দিন ধরেই শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতা ছিল, যা সোমবার আরও তীব্র হয়।
ডলারের সূচক, যা অন্যান্য প্রধান মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মূল্য পরিমাপ করে, সোমবার ১.১ শতাংশ কমে যায়। এর ফলে গত তিন বছরের মধ্যে ডলারের মান সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে। সাধারণত, এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ডলারের দিকে ঝুঁকে, কিন্তু এবার সেই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না।
বরং, বিনিয়োগকারীরা সোনা এবং অন্যান্য স্থিতিশীল খাতে বিনিয়োগ করছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েলকে বরখাস্ত করার ইঙ্গিত দেওয়ার পরেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ট্রাম্প এর আগে বেশ কয়েকবার সুদহার কমানোর জন্য পাওয়েলের সমালোচনা করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা, যা নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাতে হস্তক্ষেপ করা হলে বাজারের স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন বাজারের উদ্বেগের কারণ, তেমনি বিশ্ব অর্থনীতির ওপরও এর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, বাণিজ্য যুদ্ধ এবং শুল্কের অনিশ্চয়তা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক (ECB) এর আগে তাদের বেঞ্চমার্ক সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
অন্যদিকে, সোনার বাজারে বিনিয়োগ বাড়ছে। সোমবার সোনার দাম ২ শতাংশের বেশি বেড়ে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে, যা প্রতি আউন্স ৩,৪০০ ডলারের বেশি।
শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতা এবং ডলারের দরপতনের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া, বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা কমে গেলে, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাজারের এই অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে হলে নীতিনির্ধারকদের দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি এবং স্থিতিশীল অর্থনৈতিক নীতির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায়। ফেডারেল রিজার্ভের পরবর্তী বৈঠকের দিকে এখন সবার দৃষ্টি, যেখানে সুদের হার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও সতর্ক থাকতে হবে এবং যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তথ্য সূত্র: সিএনএন