যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য সামগ্রীতে ব্যবহৃত কৃত্রিম রং (artificial dyes) পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ। খাদ্য প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিকে এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যদিও এখনই কোনো কঠোর নিষেধাজ্ঞার কথা ভাবা হচ্ছে না। শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মার্কিন খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (Food and Drug Administration – FDA)-এর কমিশনার মার্টি মাকারি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২০২৬ সালের মধ্যে সিনথেটিক রংগুলি খাদ্য সামগ্রী থেকে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হবে। এর জন্য খাদ্য প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের উপর জোর দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য সচিব রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রও এই প্রসঙ্গে কথা বলেন। যদিও প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি, তবে তাদের সঙ্গে একটি বোঝাপড়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
এফডিএ-র পক্ষ থেকে খাদ্য প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির জন্য একটি মানদণ্ড এবং সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে, যার মাধ্যমে তারা কৃত্রিম রং-এর পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে পারবে। একইসঙ্গে, যে রংগুলির উৎপাদন বর্তমানে বন্ধ রয়েছে, সেগুলির অনুমোদনও বাতিল করা হবে।
কমিশনার মার্টি মাকারি আরও বলেন, “এফডিএ খাদ্য প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিকে অনুরোধ করছে, তারা যেন আমেরিকার শিশুদের জন্য খাদ্য সামগ্রীতে পেট্রোকেমিক্যাল রং-এর বদলে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে। ইউরোপ ও কানাডায় ইতিমধ্যেই এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই খাদ্য সামগ্রী থেকে কৃত্রিম রং সরানোর পক্ষে কথা বলছেন। তাদের মতে, এই রংগুলির কারণে শিশুদের মধ্যে অতিসক্রিয়তা (hyperactivity) এবং মনোযোগের অভাবের মতো সমস্যা হতে পারে। যদিও এফডিএ-র মতে, অনুমোদিত রংগুলি নিরাপদ এবং বেশিরভাগ শিশুর ক্ষেত্রে তাদের কোনো বিরূপ প্রভাব নেই।
বর্তমানে এফডিএ খাদ্য সামগ্রীতে ৩৬টি খাদ্য রং ব্যবহারের অনুমতি দেয়, যার মধ্যে আটটি সিনথেটিক রং রয়েছে। তবে, ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান থাকার কারণে ২০২৩ সালে ‘রেড ৩’ নামক একটি রংকে খাদ্য ও ঔষধ থেকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে কৃত্রিম রং-এর ব্যবহার ব্যাপক। তবে, কানাডা এবং ইউরোপে, যেখানে কৃত্রিম রং ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক লেবেল লাগানো বাধ্যতামূলক, সেখানে প্রস্তুতকারকরা মূলত প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করেন। ক্যালিফোর্নিয়া ও ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার মতো কয়েকটি রাজ্যে খাদ্য সামগ্রীতে কৃত্রিম রং ব্যবহারের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
খাদ্য রং নির্মাতাদের মতে, এই রংগুলির একমাত্র উদ্দেশ্য হল খাদ্যকে আকর্ষণীয় করে তোলা, বিশেষ করে শিশুদের কাছে। এই রংগুলি খাদ্য সামগ্রীতে রঙিন উপাদান না থাকার অভাব পূরণ করে।
খাদ্য প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু সংস্থা জাতীয় পর্যায়ে খাদ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য এফডিএ-র প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তবে, তারা আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ডেইরি ফুডস অ্যাসোসিয়েশন-এর সদস্যরা ২০২৬ সালের জুলাই মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল মিল প্রোগ্রামে সরবরাহ করা দুধ, পনির এবং দই-এর মতো পণ্যগুলিতে কৃত্রিম রং ব্যবহার বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অন্যান্য সংস্থাগুলি এখনই কোনো পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
অন্যদিকে, কালার ম্যানুফ্যাকচারার্স-এর আন্তর্জাতিক সংস্থা জানিয়েছে, দুই বছরের মধ্যে এই পরিবর্তন করা কঠিন। তাদের মতে, এর ফলে খাদ্য উৎপাদনে জটিলতা সৃষ্টি হবে এবং পরিচিত খাদ্য সামগ্রীর সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে।
তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্য থেকে রং সরিয়ে দিলেই আমেরিকার মানুষের প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির সমাধান হবে না। তাদের মতে, স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা কমাতে হলে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস