পোল্যান্ড রাশিয়ার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ এনেছে, যার জেরে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে। পোল্যান্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের একটি শপিং মলে আগুন লাগানোর পরিকল্পনা করার অভিযোগ এনেছে এবং এর প্রতিবাদে ক্রাকো শহরে অবস্থিত রাশিয়ান কনস্যুলেট বন্ধ করে দিয়েছে।
পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, তদন্তে তারা জানতে পেরেছে যে, গত মে মাসে ওয়ারশ শহরে একটি শপিং মলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি রাশিয়ান গোয়েন্দা সংস্থার কাজ ছিল। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোস্লাভ সিকোর্স্কি এক বিবৃতিতে জানান, “রাশিয়ান বিশেষ পরিষেবাগুলি মেরিউইলসকা স্ট্রিটে শপিং সেন্টারে একটি নিন্দনীয় নাশকতামূলক কাজ করেছে এমন প্রমাণ পাওয়ার পরে, আমি ক্রাকোতে রাশিয়ান ফেডারেশনের কনস্যুলেটের কার্যক্রম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
এর আগে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক জানান, এক বছর ধরে চলা তদন্তে তারা জানতে পেরেছেন যে, অগ্নিকাণ্ডের পেছনে মস্কোর হাত ছিল। আগুনে শপিং সেন্টারের প্রায় ১,৪০০টি দোকান সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, “আমরা নিশ্চিতভাবে জানতে পেরেছি যে মেরিউইলসকাতে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি রাশিয়ান পরিষেবাগুলোর নির্দেশে ঘটানো হয়েছে। রাশিয়ায় অবস্থান করা একজন ব্যক্তি এই ঘটনার সমন্বয় করেছেন। কিছু অপরাধীকে ইতিমধ্যে আটক করা হয়েছে, বাকিদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের খোঁজা হচ্ছে।”
পোল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে, ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হওয়ায়, রাশিয়া তাদের উপর নাশকতামূলক কার্যকলাপ, সাইবার হামলা এবং মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। তবে, রাশিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং এটিকে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, ওয়ারশ “জোর করে সম্পর্ক ধ্বংস করছে এবং তাদের নাগরিকদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে”। তিনি আরও জানান, রাশিয়া শীঘ্রই এর “যথাযথ জবাব” দেবে।
পোল্যান্ড ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক এমনিতেই ভালো যাচ্ছিল না। এর আগে, গত অক্টোবরে পোল্যান্ড পোজনানে অবস্থিত রাশিয়ান কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়, কারণ তারা নাশকতার সন্দেহে ছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া সেন্ট পিটার্সবার্গে পোলিশ কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়।
শুধু পোল্যান্ডই নয়, ইউক্রেনকে সমর্থনকারী অন্যান্য দেশও রাশিয়ার বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ এনেছে। লিথুয়ানিয়ার প্রসিকিউটররা মার্চ মাসে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভিলনিয়াসে একটি আইকেইএ (IKEA) স্টোরে অগ্নিকাণ্ডের পরিকল্পনা করার অভিযোগ এনেছেন। উল্লেখ্য, পোল্যান্ডের ঘটনার তিন দিন আগে সেখানে আগুন লেগেছিল।
ইউরোপের পশ্চিমা দেশগুলো এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, ইউক্রেনের মিত্রদের অস্থিতিশীল করতে মস্কো ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্নিসংযোগ ও অন্যান্য নাশকতামূলক কার্যকলাপ চালাচ্ছে। অক্টোবরে পোল্যান্ড বিস্ফোরক দ্রব্য ভর্তি কিছু পার্সেল পাঠানোর অভিযোগে চারজনকে আটক করে। ধারণা করা হচ্ছে, এই পার্সেলগুলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাতে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা