যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে শুরু হয়েছে তীব্র গরমের প্রভাব, যা আসন্ন গ্রীষ্মের দীর্ঘ ও কঠিন দিনগুলোর পূর্বাভাস দিচ্ছে। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে এমন অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আগে দেখা যায়নি, যা আবহাওয়াবিদদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
টেক্সাসের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, রাজ্যের বিশাল একটি অংশে, বিশেষ করে অস্টিন ও সান আন্তোনিও শহরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকবে। ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের মতে, এই গরম “ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারে”।
প্রায় ৬ মিলিয়নের বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে অস্টিন মেট্রো এলাকার বাসিন্দারাও রয়েছেন, তীব্র তাপমাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত শীতল ব্যবস্থা ও জলের অভাবে যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে দক্ষিণ টেক্সাসের কিছু অংশে “চরম” গরম অনুভূত হতে পারে। সান আন্তোনিও এবং বৃহত্তর হিউস্টন এলাকার কিছু অংশেও তাপমাত্রা মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
গরমের এই প্রথম ধাক্কা মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে, কারণ শরীর এখনো উচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি। বয়স্ক এবং শিশুদের মতো দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য পরিস্থিতি আরও উদ্বেগের কারণ।
অস্বাভাবিক গরমের কারণে টেক্সাসের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাতেও চাপ পড়তে পারে। কারণ বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় লোডশেডিং হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
যদিও রাজ্যটি ২০২১ সালের শীতকালীন বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর সৌরবিদ্যুৎ এবং ব্যাটারি স্টোরেজের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে, তবুও গরমের তীব্রতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে চরম আবহাওয়ার ঘটনা বাড়ছে, যার ফলস্বরূপ টেক্সাসেও তাপপ্রবাহের তীব্রতা বাড়ছে। গবেষণা সংস্থা ক্লাইমেট সেন্ট্রালের মতে, জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে সৃষ্ট দূষণের ফলে সান আন্তোনিওতে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরম আবহাওয়া আমেরিকার জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ। গরমের কারণে মানুষের মৃত্যুর হার অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের তুলনায় অনেক বেশি।
এই তাপপ্রবাহ শুধু টেক্সাসের জন্য নয়, বরং পুরো গ্রীষ্ম জুড়েই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি উষ্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে এবং দক্ষিণাঞ্চলের কিছু অংশে তীব্র গরম অনুভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়ার এই চিত্র গত গ্রীষ্মের পূর্বাভাসের মতোই, যখন পশ্চিমাঞ্চলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে রেকর্ড পরিমাণ গরম ছিল।
গরমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, যা খরা পরিস্থিতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে, পূর্বাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে, যা সম্ভবত একটি সক্রিয় হারিকেন মৌসুমের পূর্বাভাস দিচ্ছে।
এই ঘটনাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে, যা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে আবহাওয়ার ধরনকে প্রভাবিত করছে। বাংলাদেশের মতো দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর জন্য, বৈশ্বিক আবহাওয়ার এই পরিবর্তনগুলো বোঝা অত্যন্ত জরুরি।
আমাদেরও চরম আবহাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো মোকাবিলায় সচেতন হতে হবে।
তথ্য সূত্র: CNN