মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফর ছিলো বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতি তার বিশেষ মনোযোগ অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
খবর অনুযায়ী, ট্রাম্প যেন অনেকটা “ঘর-বাড়ি” খুঁজে পেয়েছেন এই অঞ্চলে। তার এই আগ্রহের কারণ বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়।
সৌদি আরবে ট্রাম্পকে রাজকীয় সংবর্ধনা জানানো হয়, যা তার নিজ দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের থেকেও বেশি ছিল। এরপর তিনি কাতারে যান, যেখানে তাকে একটি নতুন ৭৪৭-৮ বিমান উপহার দেওয়ার প্রস্তাব আসে, যদিও তিনি পুরোনো একটি বিমানেই সেখানে যান। রিয়াদে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, “আমরা আমেরিকার স্বর্ণযুগ শুরু করেছি। মধ্যপ্রাচ্যেরও স্বর্ণযুগ আমাদের সঙ্গেই এগিয়ে যেতে পারে।”
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ট্রাম্পের মুগ্ধতা ছিল চোখে পড়ার মতো। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন আধুনিক শহর, সুউচ্চ অট্টালিকা এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা।
তার মতে, এই অঞ্চলের নেতারা অতীতের বিভেদ ভুলে বাণিজ্যের মাধ্যমে একটি নতুন ভবিষ্যৎ তৈরি করছে। এই অঞ্চলের শাসকদের দ্রুত উন্নয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ট্রাম্পকে আকৃষ্ট করেছে, যা সম্ভবত তিনি নিজের দেশেও দেখতে চান।
ট্রাম্পের এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যে এক ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির অংশ হিসেবে তিনি এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী ছিলেন।
তবে, এই অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা এবং তাদের সরকার ব্যবস্থা নিয়ে অনেক সমালোচনাও রয়েছে। বিশেষ করে মানবাধিকার বিষয়ক কিছু অভিযোগ এবং সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রতি ট্রাম্পের নরম মনোভাব সমালোচিত হয়েছে।
অন্যদিকে, কাতার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ছোট একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও, কাতার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্বে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
দেশটি বিভিন্ন যুদ্ধ এবং সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। হামাস, তালেবান, এবং অন্যান্য বিবদমান গোষ্ঠীর সঙ্গে কাতারের সম্পর্ক রয়েছে, যা parfois যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির জন্য উপকারী হয়েছে।
তবে, কাতারের এই ভূমিকা সব সময় সহজ ছিল না। কিছু ক্ষেত্রে তাদের প্রতিবেশীরা, যেমন সৌদি আরব, তাদের সমালোচনা করেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
আল জাজিরা টেলিভিশন নেটওয়ার্কের সম্প্রচার নীতি নিয়েও অনেক সময় প্রশ্ন উঠেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই সফর ছিল মূলত একটি অর্থনৈতিক মিশন। তবে এর পাশাপাশি, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে, কাতারে অবস্থিত বিশাল মার্কিন সামরিক ঘাঁটি, যা দেশটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
ট্রাম্পের এই সফরের মাধ্যমে একদিকে যেমন মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে, তেমনি বিভিন্ন বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার বিষয়ক উদ্বেগ এবং রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা সত্ত্বেও, ট্রাম্প প্রশাসন এই অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।
তথ্যসূত্র: সিএনএন