মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক হ্রাসের সাময়িক চুক্তির ফলে চীনা ব্যবসায়ীরা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। যদিও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ কমাতে নেয়া এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানানো হচ্ছে, তবে অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে চীনা ব্যবসায়ীরা এখনই নতুন করে বিনিয়োগ করতে চাইছে না।
অনেক ব্যবসায়ী মনে করছেন, এই চুক্তি বেশিদিন নাও টিকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয় দেশই একে অপরের পণ্যের উপর আরোপিত শুল্ক কমিয়েছে। এপ্রিল মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করেছে। অন্যদিকে, চীনও তাদের শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।
এই নতুন শুল্ক হার গত বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে।
তবে, বাজারের এই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মধ্যেও, চীনের ব্যবসায়ীরা এখনো শঙ্কিত। চীনের গুয়াংডং প্রদেশের একটি কারখানার মালিক মার্গারেট জুয়াং জানান, শুল্ক কমানোর ঘোষণার পর তারা তাদের আমেরিকান ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে পাওয়া অন্তত চারটি নতুন অর্ডার পুনরায় চালু করেছেন।
তিনি বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম আলোচনা ফলপ্রসূ হবে, কিন্তু শুল্ক যে এত কমবে তা ভাবিনি।”
বর্তমানে দুই দেশই একটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির জন্য আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে। ইয়ানজিয়াং হংনান ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড কোম্পানির বিক্রয় ব্যবস্থাপক খালী ইউ জানান, তাঁরা আবার আমেরিকান গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
তিনি বলেন, “আমরা উভয় পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কিছুটা আশাবাদী। তবে শুল্ক নীতি আবারও পরিবর্তন হতে পারে, যার ফলে আমাদের আমেরিকান ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে কোনো অর্ডার নাও আসতে পারে।”
তবে, এপ্রিল মাসে শুল্ক ঘোষণার কারণে ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। জুয়াং যোগ করেন, তাঁদের হাতে এখন কেবল জুনের শেষ পর্যন্ত পণ্য তৈরির অর্ডার রয়েছে।
অথচ বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর আগে, তাদের আগস্ট মাস পর্যন্ত অর্ডার ছিল।
এই অনিশ্চয়তা বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলেছে। ডংগুয়ানের কার্বন ফাইবার অটো পার্টস প্রস্তুতকারক অ্যাকশন কম্পোজিটের বিক্রয় পরিচালক কেলভিন লিয়াও জানান, শুল্ক পরিস্থিতির কারণে তিনি নতুন একটি কারখানা তৈরির জন্য জমি কেনার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন, এবং ভাড়ার ভিত্তিতে জায়গা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, “দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি ভালো খবর। তবে মানুষ ট্রাম্পের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে, তাই আমরা এখন অপেক্ষা করছি এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা বিশ্বাস করি, বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করা একটি সাময়িক পদক্ষেপ, এবং যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হলো চীনের উন্নয়নকে সীমিত করা।”
কিছু শিল্পের উপর এখনো শুল্ক বহাল রয়েছে। হংকংয়ের ব্যবসায়ী ড্যানি লাউ, যিনি একটি অ্যালুমিনিয়াম-কোটিং কারখানার মালিক, জানান তাঁর কোম্পানি এখনো যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত প্রায় ৭৫ শতাংশ শুল্কের সম্মুখীন হচ্ছে।
তিনি বলেন, “যদিও আমাদের শিল্প এই নীতি পরিবর্তনের আওতায় পড়েনি, আমরা আশা করি আলোচনা অব্যাহত থাকবে এবং ৯০ দিনের মধ্যে ভালো খবর আসবে।”
এপ্রিল মাসে কিছু চীনা ব্যবসায়ী জানান, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের কারণে অন্যান্য বাজারে পণ্য রপ্তানির দিকে মনোযোগ দেবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্কের কারণে চীনা ব্যবসায়ীরা তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে পারে এবং তাদের উৎপাদন ক্ষমতা অন্যান্য দেশে সরিয়ে নিতে পারে।
লিয়াও জানান, তাঁদের ইতিমধ্যে ভিয়েতনামে একটি কারখানা রয়েছে, এবং সেখানকার পণ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস