নব্বই বছর বয়সেও সঙ্গীত পরিবেশনা! প্রখ্যাত লোকসংগীত শিল্পী পেগি সিগারের কণ্ঠে জীবনের গল্প।
নব্বই বছর বয়সেও মঞ্চে গান গেয়ে শ্রোতাদের মন জয় করে চলেছেন কিংবদন্তি লোকসংগীত শিল্পী পেগি সিগার। দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে বহু উত্থান-পতন দেখেছেন তিনি, সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য কালজয়ী গান।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জীবনের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন এই শিল্পী।
পেগি সিগারের সঙ্গীত জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হল তাঁর খ্যাতি। তাঁর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, বিশেষ করে স্কটিশ লোকসংগীত শিল্পী ইওন ম্যাককলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক।
ম্যাককলের লেখা বিখ্যাত গান “দ্য ফার্স্ট টাইম এভার আই স ইউর ফেস” (The First Time Ever I Saw Your Face) গানটি আসলে পেগিকে নিয়েই লেখা। সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, গানটি যখন ইওন তাঁকে প্রথম শোনান, তখন তিনি এটিকে একটি সুন্দর প্রেমের গান হিসেবেই বিবেচনা করেছিলেন, কিন্তু এর গভীরতা অনুভব করতে পারেননি।
সংগীতের জগতে পেগি সিগারের পথচলা সবসময় মসৃণ ছিল না।
তাঁর ভাষায়, “কাজের চাপটা সবচেয়ে কঠিন ছিল। আমি অসুস্থ এবং আমার পরিবারের সদস্যরা আমাকে কাঁচের মতোন দেখে।
কিন্তু মঞ্চে উঠলে সব কষ্ট দূর হয়ে যায়।” পরিবারের সমর্থন তাঁর কাছে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাঁর দুই ছেলে নেইল এবং ক্যলাম, পুত্রবধূ কেরি হার্ভে-পাইপার এবং সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার স্টফান কেয়ার সবসময় তাঁর পাশে ছিলেন।
নিজের গানের বাইরে পেগি সিগার কথা বলেছেন বব ডিলানকে নিয়েও। ডিলানের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ডিলান তখনও রবার্ট জিমারম্যান নামে পরিচিত ছিলেন।
তাঁর মতে, ডিলানের কণ্ঠস্বর হয়তো “ভালো” ছিল না, তবে তাঁর একটি চরিত্র ছিল এবং তিনি সেই চরিত্রটিকে কাজে লাগিয়েছেন।
সংগীতের মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনের ধারণায় বিশ্বাসী পেগি সিগার।
তাঁর মতে, লোকসংগীত মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্নকে তুলে ধরে এবং সমাজের পরিবর্তনে সাহায্য করে।
তিনি বলেন, “একটি লোকসংগীত তৈরি করা যায় না, এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গড়ে ওঠে।”
রাজনীতি এবং সমাজের বিভিন্ন বিষয়েও পেগি সিগারের স্পষ্ট মতামত রয়েছে।
তিনি বর্তমান আমেরিকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা মানবজাতিকে বিলুপ্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
তিনি মনে করেন, এখন আমাদের নিজেদের কণ্ঠের উপর নির্ভর করতে হবে এবং পরিবেশ থেকে উপকরণ সংগ্রহ করে বাদ্যযন্ত্র তৈরি করতে হবে।
সংগীত জীবনের বাইরে, তাঁর মায়ের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন পেগি।
তাঁর মা রুথ ক্রফোর্ড সিগার ছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের অন্যতম প্রভাবশালী সঙ্গীতজ্ঞ।
মায়ের কাজ সম্পর্কে তিনি প্রথম দিকে অবগত ছিলেন না, তবে পরে তাঁর মায়ের সঙ্গীতকর্মের গুরুত্ব বুঝতে পারেন।
নতুন প্রজন্মের সঙ্গীতশিল্পীদের উদ্দেশ্যে পেগির পরামর্শ, “গিটারে পারদর্শী হওয়ার চেয়ে গানের কথা ভালোভাবে শিখে শ্রোতাদের সামনে পরিবেশন করা উচিত।
আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে গান করুন এবং বাদ্যযন্ত্রের সুর উপভোগ করুন।”
পেগি সিগারের চূড়ান্ত অ্যালবাম ‘টেলিয়োলজি’ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
তাঁর ‘ফাইনাল ফেয়ারওয়েল’ সফর আগামী ২৮শে জুন শেষ হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান