ব্রিটিশ টেক বিলিওনেয়ার মাইক লিনচের মালিকানাধীন একটি বিলাসবহুল ইয়ট, যা গত বছর ইতালির সিসিলির উপকূলে ডুবে গিয়েছিল। এতে লিনচসহ সাতজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্যের তদন্তকারীরা বলছেন, শক্তিশালী বাতাস সম্ভবত এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ছিল।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ৫৬ মিটার লম্বা ‘বেসিয়ান’ নামের এই ইয়টটি ২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট ভোরে উল্টে যায়। দুর্ঘটনায় ৫৯ বছর বয়সী লিনচ এবং তার ১৮ বছর বয়সী মেয়ে হান্নাহও নিহত হন।
ঘটনার দুই মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে একটি বড় জালিয়াতির মামলায় লিনচকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়েছিল এবং এই সমুদ্রযাত্রাটি ছিল সেই আনন্দের উদযাপন।
যুক্তরাজ্যের মেরিন অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্রাঞ্চ (MAIB) বৃহস্পতিবার তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানায়, দুর্ঘটনার সময় ইয়টটি শক্তিশালী বাতাসের ঝুঁকিতে ছিল। এমনকি দুর্ঘটনার সময় যে পরিমাণ বাতাস ছিল, তার চেয়ে কম বাতাসেও এমন ঘটনা ঘটার সম্ভবনা ছিল।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইয়টের মালিক এবং নাবিকেরা এই ঝুঁকির বিষয়টি জানতেন না, কারণ জাহাজে উপলব্ধ স্থিতিশীলতা নির্দেশিকাতে এটি নথিভুক্ত ছিল না।
এমএআইবি ঘটনার তদন্ত শুরু করে, কারণ ‘বেসিয়ান’ যুক্তরাজ্যে নিবন্ধিত ছিল।
তবে, তারা স্বীকার করেছে যে ইতালীয় কর্তৃপক্ষের চলমান ফৌজদারি তদন্তের কারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পাওয়া সীমিত।
যুক্তরাজ্যের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঝড়ের পূর্বাভাস থাকায় দুর্ঘটনার আগের দিন ইয়টটিকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ৬ মিনিটের দিকে, যখন ইয়টটি চলন্ত অবস্থায় ছিল, পালগুলো ভাঁজ করা ছিল এবং সেন্টারবোর্ডটি উপরে তোলা ছিল, তখন ঘণ্টায় প্রায় ১৩০ কিলোমিটারের বেশি গতির বাতাস আঘাত হানে।
এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ইয়টটি উল্টে যায়।
এমএআইবি-এর তদন্তকারী সাইমন গ্রেভস বলেন, “বাতাস ইয়টটিকে একদিকে ঠেলে দেয় এবং ইয়টের স্থিতিশীলতা এটিকে আবার সোজা করার চেষ্টা করে।
আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ‘বেসিয়ান’ সম্ভবত শক্তিশালী বাতাসের ঝুঁকিতে ছিল এবং দুর্ঘটনার সময় সম্ভবত এই বাতাস ছিল।”
অন্যান্য নিহতদের মধ্যে ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক জোনাথন ও জুডি ব্লুমার, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিস ও নেদা মরভিলো এবং কানাডীয়-অ্যান্টিগুয়ীয়ান শেফ রিকাল্ডো থমাস।
লিনচের স্ত্রী অ্যাঞ্জেলা বাকারেসহ ১৫ জন এই দুর্ঘটনায় প্রাণে বাঁচেন।
৯ মে ডুবুরি নিহত হওয়ার পর থেকে ইয়টটি উদ্ধারের প্রচেষ্টা বন্ধ ছিল।
বৃহস্পতিবার উদ্ধার কাজ আবার শুরু হয়েছে।
গ্রেভস জানিয়েছেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে পালানোর সম্ভাব্য পথ এবং বোর্ডে কী ঘটেছিল সে সম্পর্কিত অতিরিক্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
গ্রেভস আরও বলেন, “এখনও অনেক কিছু অজানা রয়েছে। ইয়টটিতে প্রবেশাধিকার পাওয়ার পরে আমরা সময়ক্রম এবং সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারব।”
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা