মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের একটি দল ইতালির রোমে এক বিশেষ সফরে গিয়েছিলেন। খবর অনুযায়ী, এই সফরের খরচ বহন করেছে এমন কিছু সংস্থা, যাদের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন এই সরকারি অধিকারিকরা। এই ঘটনায় কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে একাধিক প্রশ্ন, যা বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
জানা গেছে, এই ভ্রমণের মূল আয়োজক ছিল ‘অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যালায়েন্স’ (এজিএ) নামের একটি সংস্থা। বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থাগুলির কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তারা এই ধরনের ভ্রমণের ব্যবস্থা করে থাকে। গত মাসে পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় এই সরকারি কর্মকর্তারা ভ্যাটিকান মিউজিয়ামে যান। তাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এবং লবিস্টদের একটি দল। এই সফরের ছবি প্রকাশ্যে আসার পরেই বিতর্ক দানা বাঁধে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলাস্কার অ্যাটর্নি জেনারেল ট্রিগ টেলর, লুইজিয়ানার অ্যাটর্নি জেনারেল লিজ মুরিল এবং ইডাহোর অ্যাটর্নি জেনারেল রাউল লাব্রাডর-সহ আরও অনেকে এই সফরে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের এই ভ্রমণের সমস্ত খরচ জুগিয়েছিল এজিএ। এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিল এমন কিছু কর্পোরেট সংস্থা, যাদের বিরুদ্ধে আইনভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের বিলাসবহুল ভ্রমণের সুযোগ গ্রহণ করা কর্মকর্তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। এর ফলে, তাঁদের নিরপেক্ষতা এবং সততা নিয়ে জনমনে সন্দেহ জাগে। নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের অধ্যাপক স্টিফেন গিলার্স বলেন, “সরকারি কর্মকর্তাদের এই ধরনের সুযোগ নেওয়া উচিত নয়। এর মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের পদের অপব্যবহার করছেন।”
যদিও এজিএ-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং ভ্যাটিকান কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা, যার মধ্যে মানব পাচার অন্যতম। তারা আরও দাবি করেছে, এই সফরে কোনো ধরনের মামলার বিষয়ে আলোচনা হয়নি। এজিএ-র জেনারেল কাউন্সেল তানিয়া মায়েস্টাস এক বিবৃতিতে জানান, “আইনসম্মত ভ্রমণকে আইনের শাসনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক নয়। বরং, অফিসের বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষার জন্য পক্ষপাতহীনভাবে কাজ করা জরুরি।”
অন্যদিকে, ভ্রমণের বিস্তারিত সূচি থেকে জানা যায়, কর্মকর্তাদের সকালে আইন প্রয়োগ সংক্রান্ত আলোচনা সভার পাশাপাশি, জাদুঘর পরিদর্শন এবং সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা ভ্রমণ-এর মতো বিনোদনেরও ব্যবস্থা ছিল। অংশগ্রহণকারীরা ফাইভ-স্টার হোটেল রোম ক্যাভেলি-তে ছিলেন, যা বিলাসবহুল আতিথেয়তার জন্য সুপরিচিত। কর্মকর্তাদের মধ্যে মেরিল্যান্ডের অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যান্টনি ব্রাউন-কে হোটেলের সুইমিং পুলের কাছে বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে। তাঁর অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য তিনি এই সফরে অংশ নিয়েছিলেন।
বিভিন্ন নথি থেকে জানা যায়, এজিএ-এর পক্ষ থেকে কর্মকর্তাদের জন্য বিজনেস ক্লাসের বিমানের টিকিট এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাটর্নি জেনারেল ব্রাউন ও তাঁর স্ত্রীর জন্য ১৪,০০০ ডলারেরও বেশি মূল্যের টিকিট সরবরাহ করা হয়েছিল। এছাড়া, ওহাইও-এর অ্যাটর্নি জেনারেল ডেভ ইয়োস্ট এবং তাঁর স্ত্রীর জন্য টিকিট বুক করার ব্যবস্থাও করা হয়।
এই ঘটনার পরে, বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি কর্মকর্তাদের এই ধরনের কর্পোরেট স্পনসরড ভ্রমণ তাঁদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলে কিনা। সমালোচকদের মতে, এই ধরনের সম্পর্ক স্বার্থের সংঘাত তৈরি করতে পারে এবং জনসাধারণের আস্থা কমিয়ে দিতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন