বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য নতুন আশা দেখাচ্ছে জিন সম্পাদনার এক অত্যাধুনিক পদ্ধতি। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ক্লিফটন হাইটস-এ বসবাসকারী কে জে মালডুন নামের এক শিশুর ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করে সাফল্য পাওয়া গেছে।
মারাত্মক জিনগত ত্রুটি নিয়ে জন্ম নেয়া এই শিশুটিকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বিজ্ঞানীরা একটি বিশেষ জিন সম্পাদনা কৌশল ব্যবহার করেছেন। এর ফলে, শিশুটি এখন সুস্থ জীবন যাপন করছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, এই পদ্ধতি ভবিষ্যতে বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়া আরও অনেক শিশুর জীবন বাঁচাতে পারে। কে জে-এর শরীরে CPS1 নামক একটি বিরল রোগ ধরা পড়েছিল।
জন্মের পরপরই তার শরীরে অ্যামোনিয়া জমতে শুরু করে, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সাধারণত, এই রোগের চিকিৎসায় লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে গিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন।
চিকিৎসকরা জানান, তাঁরা CRISPR প্রযুক্তি ব্যবহার করে কে জে-এর ক্ষতিগ্রস্ত জিন পরিবর্তন করেছেন। CRISPR প্রযুক্তি, যা ২০১৯ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের নোবেল পুরস্কার এনে দিয়েছিল, ব্যবহার করে তারা ডিএনএ-র মধ্যে থাকা ত্রুটিপূর্ণ একটি অংশকে সঠিক করতে সক্ষম হন।
এই পদ্ধতিতে ডিএনএ-র মধ্যে কোনো ভুল পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।
চিকিৎসাটি দেওয়ার জন্য গবেষকরা প্রথমে শিশুর শরীরে বিশেষ লিপিড ন্যানো পার্টিকেল প্রবেশ করান, যা লিভারের কোষে পৌঁছে জিন সম্পাদনার কাজটি করতে সাহায্য করে। এরপর, কয়েক মাস ধরে নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে কে জে-এর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে।
বর্তমানে, শিশুটি স্বাভাবিক খাবার গ্রহণ করতে পারছে এবং ঠান্ডা লাগার মতো সাধারণ রোগ থেকেও দ্রুত সেরে উঠছে। চিকিৎসকরা বলছেন, আগে যেখানে শিশুটির জীবন নিয়ে শঙ্কা ছিল, সেখানে এখন সে হাসিখুশিভাবে বেড়ে উঠছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, যদিও এই চিকিৎসা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে এর ফলাফল অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। এই সাফল্যের ফলে, ভবিষ্যতে বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার পথ আরও সুগম হবে বলে তাঁরা মনে করেন।
বর্তমানে, বিশ্বে প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ বিরল রোগে আক্রান্ত। এই গবেষণা তাঁদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ব্যক্তিগতকৃত চিকিৎসা তৈরি করা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল হতে পারে। তবে, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আরও উন্নত হলে খরচ কমানো সম্ভব হবে। একইসঙ্গে, এই চিকিৎসা পদ্ধতি অন্যান্য বিরল রোগের চিকিৎসায়ও প্রয়োগ করা যেতে পারে।
তাঁদের মতে, আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে এই ধরনের চিকিৎসার অগ্রগতি আরও দ্রুত হবে।
তথ্য সূত্র: CNN