ডা. জন ডেলনির সাফল্যের রহস্য: মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা, শ্রোতাদের গভীর উপলব্ধির সন্ধান। আজকের যুগে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা বাড়ছে, মানুষজন তাঁদের ভেতরের কথা বলতে চাইছেন।
এমন পরিস্থিতিতে, ডা. জন ডেলনি, যিনি ডেভ রামসের (Dave Ramsey) নেটওয়ার্কে একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান করেন, তাঁর কথা বলার ধরন অনেকের কাছেই প্রিয় হয়ে উঠেছে। তাঁর অনুষ্ঠান শুধু একটি আলোচনা চক্র নয়, বরং এক গভীর উপলব্ধির জায়গা, যেখানে শ্রোতারা তাঁদের ব্যক্তিগত, গভীর সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
ইউটিউবে তাঁর ১.২ মিলিয়ন এবং ইনস্টাগ্রামে ১.৫ মিলিয়নের বেশি অনুসারী রয়েছে।
ডা. ডেলনির মূল আকর্ষণ তাঁর আলোচনা পদ্ধতিতে। তিনি প্রচলিত মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শদাতাদের মতো নন, যিনি শুধু শ্রোতাদের অনুভূতি জানতে চান।
বরং তিনি একজন বন্ধুর মতো, যিনি মন দিয়ে শোনেন এবং কিছু দিকনির্দেশনা দেন। তাঁর এই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ অনেকের কাছেই কাঙ্ক্ষিত। বর্তমানে যখন বিশ্বজুড়ে মানসিক স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়, তখন ডেলনির এই পদ্ধতি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তাঁর অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের মানুষজন তাঁদের ব্যক্তিগত কথা জানান। পুরুষ, মহিলা, রক্ষণশীল খ্রিস্টান, ট্রাক চালক, এমনকি সেনা সদস্য এবং কৃষক—সকলেই তাঁদের জীবনের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক থেকে শুরু করে, কিভাবে দুটি বোনের ভিন্ন মতামতকে সম্মান জানানো যায়, এমন সব বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা হয়।
অনেক সময়, শ্রোতারা তাঁদের গল্প শুরু করেন এই কথা দিয়ে: “আমি আগে কখনও কাউকে বলিনি।
ডেলনির এই সাফল্যের কারণ সম্ভবত তাঁর নিজস্ব জীবন থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা। তিনি নিজে মানসিক উদ্বেগের শিকার হয়েছিলেন, যা তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
তাঁর নিজের ভাষায়, “আমি সবাইকে ভালোবাসি, এবং আমার বাড়িতে সবার জন্য দরজা খোলা।
তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক মতাদর্শের চেয়ে মানুষের প্রতি সহানুভূতি রাখা বেশি জরুরি। তাঁর মতে, “এমন একজন মানুষ দরকার যিনি আপনার সঙ্গে বসতে পারেন, আপনার কথা শুনতে পারেন এবং সত্যি কথা বলতে পারেন।
ডা. ডেলনির শৈশব কেটেছে টেক্সাসে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার। ডেলনি ছোটবেলা থেকেই তাঁর বাবার কর্মজীবনের মাধ্যমে মানুষের মানসিক কষ্টের গভীরতা উপলব্ধি করেছেন।
তাঁর বাবা প্রায়ই গভীর রাতে ফোন পেতেন, এবং ডেলনি সেই সময় ঘরে বসে তাঁদের কথা শুনতেন। কলেজ জীবনে তিনি মনোবিজ্ঞান এবং মানবিকতা নিয়ে পড়াশোনা করেন।
এরপর তিনি কাউন্সেলর শিক্ষা এবং তত্ত্বাবধানে দুটি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
ডেলনির মতে, সমাজে সংযোগের অভাব রয়েছে। প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আমরা আমাদের সামাজিক সম্পর্কগুলো থেকে দূরে চলে যাচ্ছি।
তিনি বিশ্বাস করেন, মানুষের একটি উপজাতিতে (tribe) থাকার জন্মগত আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। যখন সম্প্রদায়ের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক থাকে না, তখন মানুষ হয়তো রাজনৈতিক দলের মধ্যে আশ্রয় খুঁজে নেয়।
ডা. জন ডেলনির এই ভিন্নধর্মী আলোচনা পদ্ধতি, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা কথা বলা এবং সমাজের মানুষের প্রতি তাঁর গভীর উপলব্ধির কারণে তিনি আজ এত মানুষের কাছে প্রিয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন