যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি না হলে শুল্কের হার বাড়ানোর হুঁশিয়ারি দিলেন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট। খবর অনুযায়ী, দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন না হলে ‘পাল্টা’ শুল্ক আরোপ করা হবে। মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
রবিবার এক সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, তারা যদি আলোচনার টেবিলে আন্তরিকতা না দেখায়, তাহলে এপ্রিল মাসের ২ তারিখের আগের স্তরে শুল্ক হার পুনরায় ফিরে আসবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করার দিকে নজর রাখছে।
বেসেন্ট আরও জানান, ছোট আকারের অনেক বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে, যেখানে দ্রুত একটি সমাধানে আসা যেতে পারে। তিনি আরও যোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র আঞ্চলিক চুক্তি করার দিকেও ঝুঁকছে। উদাহরণস্বরূপ, মধ্য আমেরিকা বা আফ্রিকার কোনো অঞ্চলের জন্য নির্দিষ্ট শুল্ক হার নির্ধারণ করা হতে পারে।
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ২রা এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘মুক্তি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে ‘পাল্টা’ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে তিনি এই শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন, যার ফলে শুল্কের হার ১০ শতাংশে নেমে আসে।
এদিকে, শুক্রবার ট্রাম্প জানান, দেশগুলোর বাণিজ্য চুক্তি করার সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। আবুধাবিতে এক ব্যবসায়িক গোলটেবিলে তিনি বলেন, প্রায় ১৫০টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী, কিন্তু এত সংখ্যক দেশের সঙ্গে চুক্তি করা সম্ভব নয়। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে বেসেন্ট এবং বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুৎনিক সম্ভবত চিঠি পাঠাবেন, যেখানে বাণিজ্য করার জন্য কী পরিমাণ অর্থ দিতে হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
সম্প্রতি, জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জ্যামিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে আলোচনার পর চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ কিছুটা প্রশমিত হয়। এর ফলে সোমবার বাজারের সূচক ঊর্ধ্বমুখী ছিল। চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়, অন্যদিকে চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে।
শুল্কের কারণে ব্যবসা এবং ভোক্তাদের উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। বেসেন্ট বলেন, এই প্রশাসনের আলোচনার কৌশল হলো ‘কৌশলগত অনিশ্চয়তা’। তিনি আরও বলেন, “আমরা যদি অন্যান্য দেশগুলোকে বেশি নিশ্চয়তা দিই, তবে তারা আলোচনায় আমাদের দুর্বল করতে পারে। তবে আমি নিশ্চিত, আলোচনার শেষে ব্যবসায়ী, আমেরিকান জনগণ এবং শ্রমিক সবাই লাভবান হবে।”
ছোট ব্যবসার উপর শুল্কের প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে বেসেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত এই ছোট ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে কম শুল্কে বাণিজ্য অব্যাহত রাখবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ছোট ব্যবসায়ী শুল্কের অস্থিরতার কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ, খরচ বেড়ে যাওয়ায় তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অনেক কোম্পানি শুল্কের বোঝা কমাতে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে, যা ভোক্তাদের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। সম্প্রতি, ওয়ালমার্টসহ বেশ কয়েকটি মার্কিন কোম্পানি দাম বাড়ানোর বিষয়ে সতর্ক করেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন