মায়ের অতিরিক্ত আবদার: এক নারীর পারিবারিক দায়িত্ব ও ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন। আজকের দিনে, যখন কর্মজীবনের ব্যস্ততা বাড়ছে, তখন অনেক নারীই তাঁদের পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছেন।
বিশেষ করে, বয়স্ক বাবা-মায়ের দেখাশোনার বিষয়টি অনেক সময় একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করে। বাংলাদেশে, যেখানে পরিবারের সদস্যদের প্রতি দায়িত্ববোধ ও শ্রদ্ধাবোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে এই ধরনের চ্যালেঞ্জগুলো আরও বেশি অনুভূত হয়।
সম্প্রতি, এমনই একটি ঘটনার কথা জানা গেছে যেখানে এক নারী তাঁর মায়ের অতিরিক্ত আবদার ও প্রত্যাশা নিয়ে মানসিক চাপে ভুগছেন।
জানা যায়, ওই নারীর মা তাঁর থেকে দূরে থাকেন, কিন্তু প্রায়ই মেয়ের কাছে সময় ও মনোযোগ চান। মা তাঁর মেয়ের কাছে কাছাকাছি থাকার প্রত্যাশা করেন এবং এই কারণে তিনি মেয়েকে নানাভাবে মানসিক চাপ দেন।
অথচ, মায়ের এই ধরনের আবদার তাঁর ভাইয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় না, যিনি মায়ের কাছাকাছিই থাকেন। ওই নারীর অভিযোগ, মা সবসময় তাঁর কাছে নানা বিষয় নিয়ে অভিযোগ করেন এবং তাঁর দুর্বলতার সুযোগ নেন।
তিনি যখন মায়ের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারেন না, তখন মা কষ্ট পাওয়ার ভান করেন।
ওই নারীর ভাষ্যমতে, তিনি কর্মসূত্রে মায়ের থেকে বেশ দূরে থাকেন এবং তাঁর একটি কর্মজীবনের পাশাপাশি বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে ও একটি প্রাপ্তবয়স্ক কন্যা রয়েছে। অন্যদিকে, তাঁর ভাই অবিবাহিত এবং তুলনামূলকভাবে কম চাপযুক্ত একটি চাকরি করেন।
তিনি মায়ের কাছাকাছি থাকেন, কিন্তু মায়ের দেখাশোনার ক্ষেত্রে তেমন কোনো দায়িত্ব পালন করেন না। এই পরিস্থিতিতে, ওই নারী তাঁর মায়ের কাছ থেকে আসা অতিরিক্ত ফোন কল ও বার্তার কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
তিনি জানান, মায়ের এই আচরণ তাঁকে মানসিক দিক থেকে ক্লান্ত করে তুলেছে।
এই বিষয়ে তিনি অনলাইনে পরামর্শ চেয়েছেন। পরামর্শদাতারা তাঁকে তাঁর ব্যক্তিগত পরিসর তৈরি করার কথা বলেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, মা বা ভাইয়ের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়, তবে তিনি নিজের জীবনযাত্রার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ, তিনি ফোন ধরা বা উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এছাড়া, ধীরে ধীরে মায়ের সঙ্গে যোগাযোগের ধরন পরিবর্তন করার কথাও বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বয়স্ক বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন করা আমাদের সংস্কৃতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা এবং দায়িত্ব ভাগাভাগি করা এক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক সমাধান হতে পারে। এর মাধ্যমে, একদিকে যেমন বয়স্কদের দেখাশোনা করা সম্ভব হবে, তেমনি অন্যরাও তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন ও কর্মজীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবেন।
তথ্য সূত্র: পিপল