ক্যালিফোর্নিয়ার জীবন ছেড়ে মেক্সিকোতে: এক নারীর নতুন দিগন্তের সূচনা।
ক্যালিফোর্নিয়ার জীবনযাত্রা ছিল কঠিন, হিসাব মেলাতে হিমশিম খেতে হতো। সেখানে টিকে থাকতে না পেরে অবশেষে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে সুদূর মেক্সিকোতে পাড়ি জমিয়েছিলেন এক আমেরিকান নারী।
জ্যানেট ব্লেজার নামক এই নারীর জীবনের গল্প এখন অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা।
প্রায় ২০ বছর আগে, ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্রুজ থেকে মেক্সিকোর মাজাটলানে চলে আসেন জ্যানেট। তখন তার বয়স ছিল ৫০ বছর।
ক্যালিফোর্নিয়ায় জীবনযাত্রার উচ্চ খরচ, একাকীত্ব এবং নিজের কাজের প্রতি অতৃপ্তি—এসব কারণে তিনি হতাশ ছিলেন।
জ্যানেট জানান, “আমি সবসময় মনে করতাম আমার যথেষ্ট নেই।” মায়ের মৃত্যুর আগে তার স্বপ্নগুলো অনুসরণ করার অনুপ্রেরণা, তাকে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
জ্যানেট জানান, ক্যালিফোর্নিয়ায় তিনি সবসময় অনুভব করতেন যেন তার কোনো পরিচয় নেই, অথবা তিনি সমাজের জন্য খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নন।
সেখানে বাড়ি কেনার সামর্থ্য তার ছিল না, যা তাকে আরও হতাশ করত।
তিনি বলেন, “আমি যেন অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলাম।”
২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে, জ্যানেট প্রথমবার “অ্যাডভেঞ্চারের” উদ্দেশ্যে মেক্সিকোর মাজাটলানে ঘুরতে যান।
সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীবনযাত্রার ধরন তাকে মুগ্ধ করে।
এর কয়েক মাস পরেই, তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার জীবনকে বিদায় জানিয়ে মেক্সিকোতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়াটা শুরুতে সহজ ছিল না।
ভাষা একটা বড় বাধা ছিল, কারণ তিনি ভালোভাবে স্প্যানিশ বলতে পারতেন না।
তাছাড়া, সেখানকার সংস্কৃতিও ছিল ভিন্ন।
তবে, সেখানকার মানুষের আন্তরিকতা, উষ্ণ আবহাওয়া এবং জীবন ধারণের কম খরচ—এগুলো তাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছিল।
জ্যানেট জানান, সেখানে তিনি প্রতি মাসে ২৫০ ডলারের কম ভাড়ায় থাকতেন, যা ক্যালিফোর্নিয়ার তুলনায় অনেক কম ছিল।
মাজাটলানে এসে জ্যানেট তার ভেতরের সম্ভাবনাকে খুঁজে পান।
তিনি সেখানে একটি ইংরেজি ভাষার ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন এবং শহরের প্রথম অর্গানিক কৃষকের বাজার তৈরি করেন।
ধীরে ধীরে তিনি সেখানকার সমাজের সঙ্গে মিশে যান।
শুরুর দিকে কিছু সমস্যা হলেও, জ্যানেট ধীরে ধীরে সেখানকার জীবনযাত্রার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন।
তিনি সেখানকার মানুষের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ ও উন্মুক্ত জীবনযাত্রা উপভোগ করতে শুরু করেন।
তিনি জানান, “আমি এখানে এসে সুখী হয়েছি।”
জ্যানেট এখন আর ক্যালিফোর্নিয়ার সেই কঠিন জীবন চান না।
মেক্সিকোতে তিনি তার জীবনকে নতুন করে সাজিয়েছেন।
মাঝেমধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে তার সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে যান, কিন্তু সেখানকার জীবনযাত্রা এখন তাকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলে।
বিশেষ করে সেখানকার সহিংসতার কারণে তিনি উদ্বিগ্ন থাকেন।
জ্যানেট মনে করেন, যারা মেক্সিকোতে যাওয়ার কথা ভাবছেন, তাদের ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, “হৃদয় যা বলে, শোনো। জীবন তৈরি করো।”
বর্তমানে, জ্যানেট মাজাটলানে একটি স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন, যার ভাড়া ইউটিলিটি বিলসহ প্রায় $550 (আনুমানিক ৬০,০০০ টাকার বেশি, অক্টোবর ২০২৩ অনুযায়ী)।
তিনি তার জীবন নিয়ে খুবই খুশি এবং অন্যদেরও নিজের স্বপ্নকে অনুসরণ করতে উৎসাহিত করেন।
তিনি ২০১৯ সালে “Why We Left: An Anthology of American Women Expats” নামে একটি বই প্রকাশ করেছেন এবং বর্তমানে অন্যান্য দেশে বসবাসকারী আমেরিকানদের নিয়ে কাজ করছেন।
তথ্যসূত্র: সিএনএন