যুক্তরাষ্ট্রের বন্ড বাজারে অস্থিরতা, বাংলাদেশের জন্য কী বার্তা?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ আগামী কয়েকদিনের মধ্যে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলারের সরকারি বন্ড নিলামের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বন্ড বাজারের এই নিয়মিত কার্যক্রমটি এখন সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
বিশেষ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল ঋণ-বিষয়ক উদ্বেগের কারণে এই নিলাম আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই নিলামের ফলাফল কি বিশ্ব অর্থনীতি এবং বাংলাদেশের জন্য কোনো তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে?
বিশ্লেষকদের মতে, এই বন্ড নিলাম মূলত মার্কিন অর্থনীতির স্বাস্থ্য পরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। বন্ডের চাহিদা কমে গেলে সুদের হার বেড়ে যায়, যা সরকারের ঋণ গ্রহণের খরচ বৃদ্ধি করে।
এছাড়া, এর সরাসরি প্রভাব পড়ে ভোক্তাদের ঋণের সুদের হারেও, যেমন গাড়ি ঋণ বা ক্রেডিট কার্ডের সুদ। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে নেওয়া কিছু শুল্কনীতি এবং কর-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের বোঝা আরও বেড়েছে, যা বাজারের উদ্বেগের কারণ।
যদি এই নিলামে বন্ডের চাহিদা দুর্বল থাকে, তাহলে বন্ডের ফলন বা ইল্ড বেড়ে যেতে পারে। বন্ডের দাম এবং ফলন একে অপরের বিপরীত দিকে চলে।
অর্থাৎ, চাহিদা বাড়লে দাম বাড়ে, ফলন কমে; আর চাহিদা কমলে দাম কমে, ফলন বাড়ে। উচ্চ ফলন সরকারের জন্য বেশি ঋণ নেওয়ার খরচ বাড়ায়।
এর বাইরে, এই ফলনগুলি অর্থনীতির জন্য একটি বেঞ্চমার্ক সুদের হার হিসেবেও কাজ করে। ফলে, এর পরিবর্তনগুলি ভোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের ঋণের খরচকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদী বন্ডের চেয়ে স্বল্পমেয়াদী বন্ডের চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তারা বাণিজ্য নীতি এবং বাজেট ঘাটতি নিয়ে অনিশ্চয়তাকে দায়ী করছেন।
এই অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদে মার্কিন সরকারকে অর্থ ঋণ দিতে দ্বিধাগ্রস্ত করছে।
অর্থনীতিবিদ জন ক্যানাভ্যান এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয় – এমন ধারণা অনেক বছর ধরেই বিদ্যমান। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজার অংশগ্রহণকারীরা এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছে।”
এদিকে, মার্কিন ডলারের মানও কিছুটা কমেছে। ডলার সূচক, যা প্রধান মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ডলারের শক্তি পরিমাপ করে, প্রায় ১ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে, যা ২০২২ সালের পর সর্বনিম্ন।
এর কারণ হিসেবে বাণিজ্য নীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং বাজারের অস্থিরতাকে দায়ী করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বন্ড বাজারের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আসতে পারে।
প্রথমত, ডলারের দর পতনের কারণে বাংলাদেশের আমদানি খরচ কমতে পারে, যা বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সাহায্য করবে। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববাজারে সুদের হারের পরিবর্তন বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের এই পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
মোটকথা, যুক্তরাষ্ট্রের বন্ড বাজারের এই নিলাম শুধু একটি আর্থিক ঘটনা নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতির গতিপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। এর ফলাফল বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন