যুক্তরাষ্ট্রে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির মধ্যে, মে মাসে মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশার থেকে কম বৃদ্ধি পেয়েছে। এই খবর বিশ্ব অর্থনীতিতে, বিশেষ করে বাংলাদেশের বাজারে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে, তা এখন অনেকের কাছেই আলোচনার বিষয়।
সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে ভোক্তা মূল্য সূচক (Consumer Price Index বা CPI) সামান্য ০.১ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ২.৪ শতাংশে। এপ্রিল মাসে এই হার ছিল ২.৩ শতাংশ, যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল।
যদিও শুল্কের প্রভাব এখনো সরাসরি দেখা যাচ্ছে না, বিশ্লেষকরা বলছেন, এর কিছু লক্ষণ ইতোমধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিছু পণ্যের দাম বাড়ছে, আবার কোথাও কোথাও ভোক্তাদের চাহিদা কিছুটা কমতে দেখা যাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, খেলনা এবং গৃহস্থালীর সরঞ্জামের দাম বেড়েছে, যেখানে এপ্রিল মাস থেকে এই বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। তবে পোশাকের বাজারে দাম কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ব্যবসায়ীরা এখনো শুল্কের কারণে হওয়া খরচ সরাসরি ভোক্তাদের উপর চাপাতে দ্বিধা বোধ করছেন। অনেক কোম্পানি তাদের মুনাফা কমিয়ে অথবা অন্য কোনো উপায়ে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এই কারণে, তাৎক্ষণিক ভাবে বাজারে বড় ধরনের মূল্যবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে না। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এর প্রভাব স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
শিশুদের জন্য পণ্য প্রস্তুতকারক একটি কোম্পানি ‘ল্যালো’ (Lalo) তাদের পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, তারা তাদের পণ্যের উপর আরোপিত শুল্কের কারণে এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।
তাদের মতে, কিছু পণ্যের উপর ৩০ থেকে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নীতিনির্ধারকদের কোনো বড় পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, মুদ্রাস্ফীতি এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং কর্মসংস্থানও স্থিতিশীল।
তবে, তারা এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন যে, বাজারের এই স্থিতিশীলতা বেশি দিন নাও থাকতে পারে। কর্মসংস্থান কমে যাওয়া, ছাঁটাইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ হ্রাস—এগুলো অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কোনো পরিবর্তন হলে, তা বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানির খরচকে প্রভাবিত করতে পারে। ফলে, সেখানকার মূল্যবৃদ্ধি, বিশেষ করে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়াতে পারে, যা বাংলাদেশের বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে।
ভোক্তা মূল্য সূচকের হিসাব অনুযায়ী, আবাসন খাতে মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে, যা সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলেছে। খাদ্য ও রেস্টুরেন্টের দামও বেড়েছে, তবে ডিমের দাম কমেছে।
মোটকথা, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কনীতির প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়, তবে এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলো ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন