শিরোনাম: এলন মাস্কের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত, ‘টেসলা টেকডাউন’ আন্দোলনের ঝাঁঝ কমেনি
বিশ্বের শীর্ষ ধনী এলন মাস্কের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এখনো চলছে। টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ থেকে তিনি সরে দাঁড়ালেও, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো এখনো আলোচনার কেন্দ্রে।
সম্প্রতি, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের তীব্র বাদানুবাদ হয়, যা এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ট্রাম্পের বিশাল কর এবং অভ্যন্তরীণ নীতি বিষয়ক একটি বিল নিয়ে মাস্কের আপত্তির জের ধরে তাদের মধ্যে এই বিরোধ বাধে।
মাস্ক, যিনি ট্রাম্পের ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের জন্য ২৮৮ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছিলেন, সেই বিলটিকে ‘বিশ্রী’ বলে মন্তব্য করেন। এর পরেই ট্রাম্প মাস্কের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সরকারি চুক্তি বাতিলের হুমকি দেন।
পাল্টা জবাবে মাস্ক দাবি করেন, তিনি পাশে না থাকলে ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে যেতেন।
ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হওয়া ‘টেসলা টেকডাউন’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে, শনিবার ফ্লোরিডার ডেলরে বিচ, কেনটাকির লুইসভিল এবং জর্জিয়ার ডিক্যাটারসহ বিভিন্ন শহরে টেসলা শোরুমের বাইরে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। আন্দোলনকারীরা মাস্কের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
ওয়াশিংটন ডিসির জর্জটাউন এলাকায় বৃষ্টির মধ্যে একটি টেসলা শোরুমের বাইরে প্রায় ৩০ জন বিক্ষোভকারী জড়ো হন।
আয়োজকদের মতে, প্রতিকূল আবহাওয়া এবং ‘প্রাইড মান্থ’ উদযাপনের কারণে গত সপ্তাহের রকভিলে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভের তুলনায় এবারের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল।
আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক মেলিসা নাটসন সিএনএনকে জানান, “মাস্ক হয়তো তার অবস্থান থেকে সরে গিয়েছেন, কিন্তু আমাদের এই লড়াই এখনো শেষ হয়নি।”
‘টেসলা টেকডাউন’ আন্দোলনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, মানুষজনদের টেসলা বিক্রি করতে, শেয়ার বিক্রি করতে এবং প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
তাদের বিশ্বাস, মাস্ককে প্রতিহত করতে পারলে জীবন বাঁচানো এবং গণতন্ত্র রক্ষা করা সম্ভব হবে।
এ বছর টেসলার বিক্রি ১৩ শতাংশ কমেছে, যা তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পতন। এছাড়াও, এই সপ্তাহে টেসলার শেয়ারের দাম ১৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
গত বছরের ১৮ই ডিসেম্বর তারিখে এর শেয়ারের দাম ছিল $488.54।
আন্দোলনকারীরা মনে করেন, মাস্কের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্মেন্ট এফিসিয়েন্সি’ (DOGE) থেকে সরে আসা বা ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি, এমনকি শেয়ারের দর পতনের পরও ‘টেসলা টেকডাউন’ আন্দোলন এখনই থামবে না।
মাস্ক ‘ডগ’ (DOGE) থেকে সরে যাওয়ার পর, ‘টেসলা টেকডাউন’-এর ব্লুস স্কাই অ্যাকাউন্ট থেকে আগামী ২৮শে জুন (মাস্কের জন্মদিন) বিক্ষোভের ঘোষণা করা হয়, যা এই লড়াইকে আরও জোরদার করার ইঙ্গিত দেয়।
নাটসন বলেন, “আমরা বিলিয়নেয়ারদের আধিপত্যের শিকার হয়ে ক্লান্ত, এবং আমরা হাল ছাড়ছি না।”
আন্দোলনকারীরা পেনশন ফান্ডগুলোকে টেসলা থেকে তাদের বিনিয়োগ সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জনসম্মুখে সমালোচনার কারণে, মে মাসের শেষের দিকে কিছু দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারী টেসলার পরিচালনা পর্ষদের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছেন।
জেনিফার ফেরিস সিএনএনকে জানান, এটি ছিল টেসলার বিরুদ্ধে তার পঞ্চম প্রতিবাদ। তিনি মনে করেন, মাস্কের প্রভাব এখনো সরকারের মধ্যে বিদ্যমান।
জেমস ডেচার্ড জানান, তিনি নিয়মিত বিক্ষোভে অংশ নেন, কারণ এখানে অন্যদের সঙ্গে মিলিত হওয়াটা ভালো লাগে। তিনি আরও যোগ করেন, “আমি মানুষকে উৎসাহিত করতে এবং একত্রিত করতে চাই।”
ডোনা পাওয়েল এবং তার স্বামী ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ৫০ থেকে ৬০টি সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। তিনি মাস্ক ও ট্রাম্পকে ‘বিলিয়নেয়ার শ্রেণির দাম্ভিক’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
তিনি মনে করেন, মাস্কের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কারণে ট্রাম্পের সমর্থকরা আন্দোলনে যোগ দেবে না।
ডোনা বলেন, “ট্রাম্প এবং মাস্ক একে অপরের উপর নির্ভরশীল, তাই তারা একটা পথ খুঁজে বের করবে।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন