কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (AI) প্রযুক্তি বর্তমানে সারা বিশ্বেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। উন্নত বিশ্বে এর কর্মসংস্থান এবং অর্থনীতির উপর কেমন প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা ও বিতর্ক।
সম্প্রতি, এই বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও ভিন্নমত দেখা যাচ্ছে। দেশটির হোয়াইট হাউজের একজন উপদেষ্টা, যিনি এআই বিষয়ক নীতি নির্ধারনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, তিনি প্রযুক্তিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ আশাবাদী।
অন্যদিকে প্রযুক্তিখাতের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এআইয়ের কারণে মানুষের চাকরি হারানোর আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
হোয়াইট হাউজের এআই বিষয়ক উপদেষ্টা ডেভিড স্যাকস মনে করেন, এআই প্রযুক্তি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হতে চলেছে।
তাঁর মতে, এর ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে এবং মানুষের কাজ হারানোর সম্ভবনা কম। তিনি এআইয়ের কারণে ব্যাপক হারে বেকারত্ব সৃষ্টির ধারণাকে উড়িয়ে দিয়েছেন।
স্যাকস ওয়াশিংটন ডিসিতে এক সম্মেলনে বলেন, “আমার মনে হয় না এআই ব্যাপক হারে বেকারত্ব সৃষ্টি করবে। বরং মানুষের কাজের কিছু অংশ প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে, পুরোটাই নয়।”
তিনি আরো যোগ করেন, “আমি মনে করি না, ২০ শতাংশ হারে বেকারত্ব বাড়বে।”
অন্যদিকে, ‘অ্যানথ্রপিক’ নামক একটি এআই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডারিও আমোদি এআইয়ের কারণে উদ্বেগের কারণ দেখছেন।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এআইয়ের কারণে অনেক মানুষের, বিশেষ করে নতুন চাকরি প্রার্থীদের কাজ হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
আমোদি মনে করেন, এআইয়ের উদ্ভাবনী ক্ষমতা মানুষের ধারণাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে, ফলে কর্মীদের নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সমস্যা হতে পারে। তাঁর মতে, এই বিষয়টি নিয়ে নীতিনির্ধারকদের এখনই গুরুত্ব সহকারে ভাবা উচিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এআইয়ের অগ্রগতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের ফলে কিছু অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে, তবে এর পরিমাণ কেমন হবে, তা এখনই বলা কঠিন।
অন্যদিকে, সম্প্রতি করা একটি জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করে, আগামী দুই দশকে এআইয়ের কারণে কাজের সুযোগ কমবে। অর্ধেকের বেশি আমেরিকান এআইয়ের কারণে চাকরি হারানোর বিষয়ে উদ্বিগ্ন।
তবে, ডেভিড স্যাকস মনে করেন, এআইয়ের অগ্রগতিকে ঠেকানো সম্ভব নয়। তিনি একে একটি “সমুদ্রের ঢেউ”-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা আসবেই।
তাঁর মতে, এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। তিনি এআই বিষয়ক নীতিমালায় বিধিনিষেধ আরোপের বিপক্ষে মত দিয়েছেন।
তাঁর ধারণা, চীন এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। তাই, এআইয়ের দৌড়ে টিকে থাকতে হলে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নীতিমালায় এআই সংক্রান্ত কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে এআই কোম্পানিগুলোকে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হতে পারে।
তবে, সমালোচকেরা বলছেন, এর ফলে সমাজে এআইয়ের সম্ভাব্য ক্ষতিগুলো প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।
এআই প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে মানবজাতির জন্য বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। তবে এর ভালো-মন্দ দুটো দিকই রয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, যেমন বাংলাদেশে, এআই কর্মসংস্থান এবং অর্থনীতির উপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে এখনই আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন।
বিশেষ করে, পোশাক শিল্প, তথ্য প্রযুক্তি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে অটোমেশন বা প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন