আজকের দিনে ছেলেদের ভালো বাবা হওয়া: বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
পুরুষত্বের সংজ্ঞা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে। একসময়, পুরুষদের জন্য আদর্শ ছিল পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জন করা, কঠোর ও স্বাধীন থাকা, এবং দুর্বলতা বা অনুভূতির প্রকাশ থেকে দূরে থাকা।
কিন্তু বর্তমানে অনেক পুরুষ, যারা বাবা হচ্ছেন, তারা এই ধারণা থেকে সরে আসছেন। তাদের মতে, এই পুরনো ধারণাগুলো এখন আর কার্যকরী নয়। পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলো এখন একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে এবং ছেলেদের সুখী ও সুস্থ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে এবং প্রয়োজনে সাহায্য চাইতে উৎসাহিত করতে হবে।
অতীতের কঠোর নিয়মের পরিবর্তে, নতুন দক্ষতা অর্জনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
বাবা হিসেবে ছেলেদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ছেলেরা খুব দ্রুত বুঝতে পারে যে তাদের মায়ের মতো হওয়া উচিত না।
অনেক ক্ষেত্রে বাবারাই এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাবারা তাদের ছেলেদের সাথে খেলাধুলা করেন, তাদের আদর করেন, যা ছেলেদের মধ্যে উষ্ণতা, সহানুভূতি এবং ভালোবাসার মতো গুণাবলী বিকাশে সাহায্য করে।
একজন ভালো বাবা হওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ছেলেদের জন্য উদাহরণ তৈরি করা। ছেলেদের সরাসরি কিছু শেখানোর পাশাপাশি, বাবা হিসেবে নিজেদের ভালো উদাহরণ তৈরি করতে হবে।
এর মাধ্যমে ছেলেরা বুঝতে পারে কেমন মানুষ হিসেবে তারা বেড়ে উঠবে। বাবাদের ভুল করার সম্ভাবনা থাকে, তবে সেই ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়, সেটিও ছেলেদের দেখানো উচিত।
ছেলেদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য, তাদের জন্য এমন কিছু আদর্শ উদাহরণ তৈরি করতে হবে যাদের তারা অনুসরণ করতে পারে। ভালো মানুষ মানে কেবল কঠিন বা শক্তিশালী হওয়া নয়, বরং এমন একজন যিনি তার পরিবারের প্রতি যত্নশীল, শিক্ষক বা কোচের মতো একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি।
ছেলেদের সুখী ও সুস্থ জীবন দিতে চাইলে, পুরনো পুরুষতান্ত্রিক ধারণাগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে আসার প্রয়োজন নেই। বরং, আগ্রাসী এবং সংবেদনশীলতার মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখা দরকার।
পুরুষদের মধ্যে এখনো কিছু ঐতিহ্যবাহী গুণাবলী, যেমন- সুরক্ষা ও পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা—প্রাসঙ্গিক এবং সহায়ক। তবে, সব পরিস্থিতিতেই কেবল সেই ধরনের পুরুষত্বের প্রকাশ করা উচিত নয়।
ভারসাম্যপূর্ণ এবং নমনীয় হওয়া প্রয়োজন। একজন পুরুষ এক পরিবেশে ঐতিহ্যবাহী থাকতে পারে, আবার অন্য পরিবেশে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করতে পারে।
বর্তমানে, অনেক বাবা চান তাদের ছেলেরা আত্মবিশ্বাসী, সংবেদনশীল এবং আবেগপূর্ণ হোক। তাদের উচিত ছেলেদের শেখানো যে তারা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
তাদের নিজেদের যত্ন নেওয়া এবং অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন বাবার আর্থিক যোগান দেওয়ার পাশাপাশি মানসিক সমর্থন ও যত্ন নেওয়াও জরুরি। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, এবং ছেলেদের উপর কঠোরতা বা অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা উচিত নয়।
ছেলেদের মধ্যে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ, অন্যদের প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং সমাজের জন্য কিছু করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন