ডলারের বিনিময় হারে অস্থিরতার মধ্যে, বিশ্বজুড়ে গাড়ির বাজারেও দেখা যাচ্ছে নানা পরিবর্তন। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ির দাম নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে, যা বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
জানা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে আমদানি করা গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপ করা হলেও, প্রাথমিকভাবে গাড়ির দামে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি বেশিদিন স্থায়ী নাও হতে পারে।
এপ্রিল মাস থেকে এই শুল্ক নীতি কার্যকর হওয়ার পর, অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন গাড়ির দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। কিন্তু, মে মাস পর্যন্ত নতুন গাড়ির গড় দাম সামান্য কমেছে, মাত্র ০.২ শতাংশ। এমনকি প্রাক-শুল্ক সময়ের তুলনায়, অর্থাৎ মার্চ মাসের তুলনায় দাম বেড়েছে মাত্র ২.৫ শতাংশ।
গাড়ির দাম স্থিতিশীল থাকার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এপ্রিল ও মে মাসে শুল্কের কারণে ক্রেতারা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন, ফলে চাহিদা কমে যাওয়ায় বিক্রেতারা দাম বাড়াতে পারেননি। তাছাড়া, অনেক ডিলার এখনো আগের আমদানি করা গাড়ির মজুত বিক্রি করছেন। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোও চাইছে দাম বাড়িয়ে সরাসরি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরাগভাজন হতে।
তবে, বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি বেশিদিন টিকবে না। তাদের ধারণা, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে গাড়ির দাম বাড়তে শুরু করবে। বিশেষ করে যখন ২০২৩ মডেলের গাড়ি বাজারে আসবে, তখন দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ব্যাংক অফ আমেরিকার একজন অটো বিশ্লেষক, অ্যাডাম জোনাস, মনে করেন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো সম্ভবত ২০২৩ মডেলের গাড়ি বাজারে আসার সময় দাম বাড়াবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গাড়ির দাম বৃদ্ধির এই প্রবণতা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব বাণিজ্য এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে। যেহেতু বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান, তাই এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মত দেশগুলোরও এই বিষয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন।
আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কনীতি এবং বাজারের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা থাকলে, ব্যবসায়ীরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এবং ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাড়ির দাম বাড়লে তা ক্রেতাদের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ হবে। তবে, এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, দাম বাড়লেও তা ধীরে ধীরে বাড়তে পারে। তাছাড়া, বিভিন্ন ডিলার এবং প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন অফার ও ছাড় দিতে পারে।
বর্তমানে, আমেরিকান ভোক্তাদের মধ্যে নতুন গাড়ি কেনার আগ্রহ বাড়ছে। কনফারেন্স বোর্ড-এর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ছয় মাসের মধ্যে ১২.১ শতাংশ আমেরিকান নতুন গাড়ি কেনার কথা ভাবছেন, যা আগের মাসের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
সুতরাং, বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ির বাজারের এই পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়। বিশ্ব অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের দিকে নজর রেখে, আমাদের দেশের নীতি নির্ধারক এবং ব্যবসায়ীদের সচেতন থাকতে হবে।
তথ্য সূত্র: CNN