মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তার সরাসরি প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সীমান্ত বাণিজ্য নির্ভর ব্যবসায়গুলোতে। বিশেষ করে, এই সিদ্ধান্তের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা, যা ভোক্তাদের ওপরও চাপ সৃষ্টি করছে।
এছাড়া, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি নির্মাণ খাতকেও নতুন করে উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে, বিশেষ করে অ্যারিজোনায়, মেক্সিকোর সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর থেকেই তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
অনেক ব্যবসায়ী এরই মধ্যে পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন, যার ফলে ভোক্তাদের পকেট থেকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, চেম্বারলেইন ডিসট্রিবিউটিং নামক একটি কোম্পানি, যারা মেক্সিকো থেকে প্রতি বছর প্রায় ৫০ লাখ বাক্স ফল ও সবজি আমদানি করে, জানিয়েছে যে তারা এখন থেকে তাদের পণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করবে।
এর ফলে টমেটো, ক্যাপসিকাম, শসা, শিম এবং অন্যান্য পচনশীল সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস ও টেক্সাসের ফোর্ট ওয়ার্থে অবস্থিত বিরিরিয়া চ্যালিয়ো নামের একটি রেস্টুরেন্ট চেইন-এর মালিক রাউল লুইস জানান, তারা এরই মধ্যে তাদের মেনুতে দামের পরিবর্তন আনতে শুরু করেছেন।
তাদের কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আনা মাংস ও ফলের দাম বাড়ায় তারা এখন খাদ্য তালিকায় কাটছাঁট করার কথা ভাবছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের হিস্পানিক চেম্বার অফ কমার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রামিরো কাভাজোস বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এই শুল্কের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, কারণ তাদের বড় কোম্পানির মতো আর্থিক সক্ষমতা নেই।
ফলে, তাদের পক্ষে এই বাড়তি খরচ বহন করা কঠিন হয়ে পড়বে এবং শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপরই এর বোঝা চাপানো হবে।
অন্যদিকে, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির কারণে নির্মাণ ব্যবসায়ও সংকট তৈরি হয়েছে।
হিস্পানিক কনস্ট্রাকশন কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী জর্জ কারিলো জানান, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ায় তারা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।
তাদের পক্ষে বেশি পরিমাণে মালামাল মজুদ করে রাখা সম্ভব নয়।
ফলে, প্রকল্পের কাজ সময় মতো শেষ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
আগে থেকেই অনেক ব্যবসায়ী শুল্ক আরোপের আশঙ্কায় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
অ্যারিজোনা-মেক্সিকো কমিশনের মুখপাত্র ভানেসা নিয়েলসেন জানান, শুল্ক আরোপ হলে সীমান্ত অঞ্চলের মানুষজন, যারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন, তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এছাড়া, মেক্সিকোর ব্যবসায়ীরাও শুল্কের কারণে লোকসানের শিকার হবেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্ক নীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি উদ্বেগের কারণ।
এর ফলে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র হতে পারে, যা বিভিন্ন দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এছাড়া, ভোক্তাদের মধ্যে আস্থা কমে যেতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস