স্বাস্থ্য সঞ্চয় হিসাব (Health Savings Account – HSA): অবসর জীবনে আপনার জন্য এর গুরুত্ব

আজকের দিনে, ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য আর্থিক পরিকল্পনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাতে ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের কথা চিন্তা করলে, একটি নির্ভরযোগ্য সঞ্চয় ব্যবস্থা অপরিহার্য। যদিও স্বাস্থ্য সঞ্চয় হিসাব (HSA) সরাসরিভাবে বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়, তবে এর ধারণাটি আমাদের দেশের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিক্ষা নিয়ে আসে। এটি মূলত এমন একটি বিষয় যা উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক পরিকল্পনার ধারণা দেয়।

স্বাস্থ্য সঞ্চয় হিসাব (HSA) কি?

HSA হল মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ ধরনের সঞ্চয় হিসাব। এই হিসাবের মূল উদ্দেশ্য হল স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন খরচের জন্য অর্থ জমা করা। এখানে জমা করা অর্থের উপর পাওয়া যায় বিশেষ কিছু সুবিধা, যা এটিকে আকর্ষণীয় করে তোলে। HSA-এর মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হল:

• কর সুবিধা (Tax Benefits): HSA-তে অর্থ জমা করলে করের সুবিধা পাওয়া যায়। অর্থাত্‍, এই অ্যাকাউন্টে আপনি যে পরিমাণ টাকা জমা করেন, তা আপনার করযোগ্য আয় থেকে বাদ যায়। এছাড়া, এই অ্যাকাউন্টে জমানো টাকার বৃদ্ধিও করমুক্ত থাকে এবং স্বাস্থ্যখাতে ব্যবহারের সময়ও কোনো কর দিতে হয় না।

• বিনিয়োগের সুযোগ (Investment Opportunities): HSA-এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিষয়ক খরচের জন্য অর্থ জমা করার পাশাপাশি, সেই অর্থকে বিভিন্ন বিনিয়োগের মাধ্যমে আরও বাড়ানোর সুযোগ থাকে।

HSA-এর ধারণা থেকে আমরা কি শিখতে পারি?

যদিও বাংলাদেশে সরাসরি HSA-এর মতো কোনো ব্যবস্থা নেই, তবে এই হিসাবের ধারণা থেকে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখতে পারি। যেমন:

• দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয়ের গুরুত্ব (Importance of Long-Term Savings): HSA-এর মূল ধারণা হল, স্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি অবস্থার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অর্থ সঞ্চয় করা। এই ধারণা আমাদের দেশের মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, স্বাস্থ্যখাতে অপ্রত্যাশিত খরচ যে কোনো সময় হতে পারে।

• কর সুবিধা: বাংলাদেশেও বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় প্রকল্পে করের সুবিধা পাওয়া যায়। তাই, ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করার সময়, করের সুবিধা আছে কিনা, তা বিবেচনা করা দরকার।

• বিনিয়োগের সুযোগ: HSA-এর মতো, আমাদের দেশেও বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগগুলোর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে সঞ্চিত অর্থকে আরও বাড়ানো যেতে পারে।

অবসর জীবনে HSA-এর ব্যবহার (Hypothetical Use in Retirement):

ধরা যাক, কোনো ব্যক্তি প্রতি বছর ৬,০০০ ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৬,৫০,০০০ টাকা) HSA-তে জমা করেন এবং ১০ বছর ধরে এই হিসাবে বার্ষিক ৫% হারে সুদ পান। তাহলে, ১০ বছর পর তার হিসাবে প্রায় ১০,০০০ ডলার (প্রায় ১০,৮০,০০০ টাকা) জমা হবে। এই পুরো সময়ে তাকে কোনো কর দিতে হবে না।

অন্যদিকে, যদি কোনো ব্যক্তি এই একই পরিমাণ অর্থ (৬,০০০ ডলার বা ৬,৫০,০০০ টাকা) একটি সাধারণ বিনিয়োগ অ্যাকাউন্টে জমা করেন, তবে তাকে প্রথমে কর দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি তার করের হার ২৫% হয়, তাহলে তাকে ৪,৫০০ ডলার (প্রায় ৪,৮৬,০০০ টাকা) জমা করতে হবে। এরপর, যদি তিনি ৫% হারে সুদ পান, তাহলে ১০ বছর পর তার অ্যাকাউন্টে ৭,৪১২ ডলার (প্রায় ৮,০০,০০০ টাকা) জমা হবে। এরপর যখন তিনি এই টাকা তুলবেন, তখনও তাকে মূলধনী লাভের উপর কর দিতে হবে।

উপসংহার

স্বাস্থ্য সঞ্চয় হিসাব (HSA) সরাসরিভাবে বাংলাদেশে প্রযোজ্য না হলেও, এর ধারণা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি অবস্থার জন্য দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয়ের গুরুত্ব বোঝায় এবং সেই সঙ্গে কর সুবিধা ও বিনিয়োগের সুযোগের সদ্ব্যবহার করার কথা বলে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে, স্বাস্থ্যখাতে ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলায় একটি সুপরিকল্পিত আর্থিক পরিকল্পনা তৈরি করা অপরিহার্য।

তথ্য সূত্র: Associated Press