হিমযুগের বিলুপ্ত প্রাণী, “উলি ম্যামথ”-এর বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞানীদের এক যুগান্তকারী প্রচেষ্টা চলছে।
সম্প্রতি, একটি বায়োটেক কোম্পানি, বিশাল (Colossal Biosciences), ইঁদুরের জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদের শরীরে ঐ ম্যামথের মতো ঘন লোম তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
এই গবেষণা ভবিষ্যতে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিদের, বিশেষ করে এশীয় হাতির জিন পরিবর্তন করে তাদের “পুনরুজ্জীবিত” করার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই কোম্পানিটি ২০১৬ সাল থেকে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো, প্রায় ৪ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া “উলি ম্যামথ”-কে ফিরিয়ে আনা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা ইঁদুরের শরীরে সাতটি জিনের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন, যার ফলে তাদের লোমগুলো লম্বা ও ঘন হয়েছে, অনেকটা ম্যামথের লোমের মতো।
এই নতুন ইঁদুরগুলোর নামকরণ করা হয়েছে “কলোসাল উল্লি মাউস” (Colossal woolly mouse)।
তবে, এই গবেষণা এখনো কোনো বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নালে প্রকাশিত হয়নি এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরীক্ষিতও হয়নি।
ইউনিভার্সিটি অফ বাফেলোর জীববিজ্ঞানী ভিনসেন্ট লিঞ্চ (Vincent Lynch), যিনি এই গবেষণার সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন, তিনি এই প্রযুক্তিকে “প্রযুক্তিগতভাবে বেশ আকর্ষণীয়” বলে মন্তব্য করেছেন।
বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের ডিএনএ (DNA) ডাটাবেস পরীক্ষা করে লোমের গঠন এবং চর্বি বিপাকের সাথে সম্পর্কিত জিনগুলো চিহ্নিত করেছেন।
কলোসালের প্রধান বিজ্ঞানী বেথ শাপিরো (Beth Shapiro) জানিয়েছেন, “এই জিনগত পরিবর্তনগুলো ইতোমধ্যে কিছু জীবিত ইঁদুরের মধ্যে বিদ্যমান ছিল, তবে আমরা সেগুলোকে একত্রিত করে একটি ইঁদুরের মধ্যে নিয়ে এসেছি।
ঠান্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষমতা, যা উল্লি ম্যামথের টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য ছিল, সেই বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনা করে এই দুটি বৈশিষ্ট্যকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
কলোসাল জানিয়েছে, তারা প্রথমে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষাটি সম্পন্ন করতে চাইছে, যাতে প্রক্রিয়াটির কার্যকারিতা নিশ্চিত করা যায়।
এরপর তারা এশীয় হাতির ভ্রূণে (embryo) পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে, কারণ হাতিরা উল্লি ম্যামথের সবচেয়ে কাছের জীবিত প্রজাতি।
তবে, এশীয় হাতি একটি বিপন্ন প্রজাতি হওয়ায় এই ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনেক জটিলতা এবং সরকারি অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
কলোসাল বায়োসাইন্সেস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বেন লাম (Ben Lamm) জানিয়েছেন, তাদের কোম্পানি এই প্রকল্পের জন্য ইতোমধ্যে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪,৩০০ কোটি টাকা, যেখানে ১ ডলার = ১০৭ টাকা) সংগ্রহ করেছে।
তবে, অনেক বিজ্ঞানী এই “বিলুপ্ত প্রজাতি ফিরিয়ে আনা” (de-extinction) ধারণা নিয়ে সন্দিহান।
মন্টানা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার প্রেসটন (Christopher Preston) বলেছেন, “আপনি হয়তো এশীয় হাতির লোমের ধরন পরিবর্তন করতে বা তাকে ঠান্ডার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম হবেন, কিন্তু এর মাধ্যমে উল্লি ম্যামথকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
আপনি কেবল একটি এশীয় হাতির পরিবর্তন করছেন।”
মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী প্রযুক্তিবিদ্যার অধ্যাপক ভানু তেলুগু (Bhanu Telugu) এই গবেষণার প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন।
তিনি মনে করেন, এই ধরনের গবেষণা প্রাণী ও মানুষের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও সাহায্য করতে পারে।
বেন লাম আরও জানিয়েছেন, কোম্পানিটি স্বাস্থ্যখাতেও কাজ করছে এবং এই প্রযুক্তি তাদের ব্যবসার একটি অংশ।
বর্তমান বিশ্বে, জিন প্রকৌশল (genetic engineering) এবং বায়োটেকনোলজির (biotechnology) অগ্রগতি মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনছে।
এই প্রযুক্তি একদিকে যেমন নতুন রোগের চিকিৎসা আবিষ্কারে সাহায্য করছে, তেমনি খাদ্য উৎপাদন এবং পরিবেশ সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতেও অবদান রাখছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)