ফিলিস্তিনের গাজায় বন্দী এক ইসরায়েলি-মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দিতে এবং আরও চারজনের মরদেহ হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত রয়েছে হামাস। সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে হওয়া আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।
হামাস জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি আলোচনার পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।
শুক্রবার হামাসের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে যুদ্ধবিরতি পুনরায় শুরুর প্রস্তাব পায়। এই প্রস্তাবের জবাবে হামাস ইসরায়েলি নাগরিক এডান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে।
এডান একইসঙ্গে মার্কিন নাগরিকত্ব ধারণ করেন। এছাড়াও, হামাস আরও চারজনের মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়েও সম্মতি জানিয়েছে।
এর আগে, হামাসের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা হুসাম Badran জানান, হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিভিন্ন পর্যায়ে এটি কার্যকর করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল যদি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে, তবে আলোচনা শূন্যের কোঠায় চলে আসবে।
যদিও ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। গত মঙ্গলবার, কাতারের রাজধানী দোহায় মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে নতুন দফা আলোচনা শুরুর ঘোষণা করা হয়। ইসরায়েলও আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে।
গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি গত ১ মার্চ শেষ হয়েছিল। তবে পরবর্তী ধাপ নিয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি। যুদ্ধবিরতির প্রথম ছয় সপ্তাহে হামাস ৩৩ জন বন্দীকে মুক্তি দেয়, যাদের মধ্যে আটজন মারা গিয়েছিল। এর বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় ১,৮০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়। এদের মধ্যে অনেকেই বিনা বিচারে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ছিলেন।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি নতুন করে করতে ব্যর্থ হওয়ার পর, ইসরায়েল অবিলম্বে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে। এর ফলে ২৩ লাখ মানুষ খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটের চরম ঝুঁকিতে পড়েছে।
খান ইউনিস থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষ খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবের কারণে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয়ের (OCHA) ওলগা চেরেভকোও আল জাজিরাকে বলেছেন, গাজাবাসীরা বিভিন্ন স্তরে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি অনুভব করছেন।
ওলগা চেরেভকো আরও জানান, যুদ্ধবিরতি শুরুর সময় যে আশা জেগেছিল, তা এখন ভয়ে পরিণত হয়েছে। সরবরাহ দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (World Food Programme) ২৫টি রুটি তৈরির কারখানার মধ্যে ছয়টি বন্ধ করতে হয়েছে, কারণ তাদের চালানোর জন্য জ্বালানি নেই।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ভূমি করিডোর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৮০ শতাংশ মানুষ খাদ্য সংগ্রহের সুযোগ হারিয়েছে, যার ফলে সংকট আরও বেড়েছে।
ইসরায়েল একটি অত্যাবশ্যকীয় পানি শোধনাগার কেন্দ্রের বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছে, যা গাজার খাবার পানির সরবরাহকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
চেরেভকো বলেন, যুদ্ধের মাসগুলোতে অধিকাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা আগে থেকেই শোচনীয় ছিল। সর্বশেষ এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় ৬ লক্ষ মানুষের খাবার পানির সুযোগ কমে গেছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও, ইসরায়েল গাজায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে। গাজা শহরের পাশাপাশি বেইত লাহিয়ায় চালানো হামলায় শিশুসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৮,৫২৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,১১,৯৫৫ জন আহত হয়েছে।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস পরে মৃতের সংখ্যা সংশোধন করে জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা এবং মৃত বলে ধারণা করা মানুষের সংখ্যাসহ মোট মৃতের সংখ্যা ৬১,৭০০ এর বেশি।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলায় ১,১৩৯ জন নিহত হয়েছিল এবং ২০০ জনের বেশি মানুষকে বন্দী করা হয়েছিল।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা