গাজায় বন্দী এক ইসরায়েলি-মার্কিন সেনাকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে হামাস। একইসঙ্গে, আরও চার ইসরায়েলি-মার্কিন নাগরিকের মরদেহ হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। চলমান যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার মধ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শুক্রবার (তারিখ উল্লেখ করতে হবে) হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, তারা মার্কিন নাগরিকত্ব রয়েছে এমন ইসরায়েলি সেনা, ইদান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত। এছাড়াও, আরও চার ইসরায়েলি-মার্কিন নাগরিকের মরদেহও তারা ফেরত দিতে চায়।
হামাস জানিয়েছে, কাতারে আলোচনা পুনরায় শুরুর জন্য বৃহস্পতিবার পেশ করা একটি প্রস্তাবের প্রতি তারা ‘ইতিবাচক’ সাড়া দিয়েছে। তবে, ইসরায়েলি-মার্কিন জিম্মিদের মুক্তি বিনিময়ে তারা ঠিক কী চাইছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
গত জানুয়ারিতে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম দফা কার্যকর হয়েছিল, কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে তা ভেস্তে যায়। হামাস বর্তমানে চাইছে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দফা কার্যকর করতে, যা এই সংঘাতের চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটাবে। অন্যদিকে, ইসরায়েল এখনো দ্বিতীয় দফায় যেতে রাজি নয়। তারা চাইছে প্রথম দফার মেয়াদ আরও কয়েক সপ্তাহ বাড়ানো হোক, যা ভবিষ্যতে নতুন করে অভিযান শুরুর সম্ভাবনা খোলা রাখবে। ট্রাম্প প্রশাসনের জিম্মি বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফও এই বিষয়ে একটি প্রস্তাবের জন্য চাপ দিচ্ছেন, যেখানে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
গাজায় আটক মার্কিন নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল। ফলে, আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়ার হামাসের এই প্রস্তাব ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, যদি এটি বৃহত্তর কোনো চুক্তির অংশ হয়।
হামাসের বিবৃতির পর নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ইসরায়েল ‘উইটকফ প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং নমনীয়তা দেখাচ্ছে’। তবে তারা আরও জানায়, ‘হামাস তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে এবং কোনো পরিবর্তন করতে রাজি নয়’। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আরও বলা হয়, ‘একইসঙ্গে, তারা কৌশল ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে—মার্কিন জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে তাদের খবরগুলো আলোচনার ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হচ্ছে’। নেতানিয়াহু শনিবার রাতে তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে আলোচনা দলের কাছ থেকে বিস্তারিত প্রতিবেদন নেবেন এবং ‘জিম্মিদের মুক্তির পরবর্তী পদক্ষেপগুলো’ নির্ধারণ করবেন।
গাজায় যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তির বিরোধিতা করে আসছেন নেতানিয়াহু। এর পেছনে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। তবে, ইসরায়েলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখাটা যে জরুরি, সে বিষয়ে তিনি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলছিল। এর মধ্যে, গত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের অপ্রত্যাশিত হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হামাসের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে, যার লক্ষ্য ছিল মার্কিন নাগরিকদের মুক্ত করা। হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে বলেন, গাজায় এখনো আটকে থাকা ৫৮ জন জিম্মিকে মুক্তি না দিলে ‘চরম মূল্য দিতে হবে’। ধারণা করা হয়, তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও কম এখনো জীবিত আছে।
ইসরায়েল সরকার সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র ও হামাসের মধ্যে আলোচনার খবর নিয়ে সীমিত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে শুধু আলোচনার কথা স্বীকার করে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। তবে, দেশটির প্রভাবশালী পত্রিকা ইয়েদিওথ আহরোনথ জানিয়েছে, ইসরায়েল ‘হতবাক’ হয়েছে এই খবর জানতে পেরে যে, ট্রাম্পের দূত ‘গোপনে দোহায়’ হামাসের এক শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা চালিয়েছেন।
হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি, রোববার থেকে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে বিদ্যুতের সরবরাহও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের কারণে গাজার প্রায় পুরো জনসংখ্যা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এতে প্রায় ৪৮,৫০০ জন নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। গাজার বিরাট এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির প্রথম ছয় সপ্তাহে ইসরায়েলি পক্ষের বিনিময়ে মুক্তি পাওয়া ২৬ জন জিম্মির মধ্যে ছিলেন ২১ জন জীবিত এবং ৫ জনের মরদেহ। এছাড়া, ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী প্রায় ১,৮০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর ফলে গাজায় খাদ্য, আশ্রয় এবং চিকিৎসা সামগ্রী পুনরায় প্রবেশ করতে পেরেছিল।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান