যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় পুতিনের শর্ত, সংকটের গভীরে প্রবেশ
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এমন কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছেন যা সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে। পশ্চিমা বিশ্ব যখন আলোচনার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে আসার চেষ্টা করছে, তখন পুতিনের এই পদক্ষেপ অনেককে হতাশ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ইউরোপীয় নেতারা একমত হয়েছিলেন যে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের চাবিকাঠি এখন রাশিয়ার হাতে। তারা আশা করেছিলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রাশিয়া একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার ক্রেমলিনে এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন জানান, প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাঁর কিছু শর্ত রয়েছে।
পুতিন বলেন, ‘বিষয়টি সঠিক, আমরা অবশ্যই এর সমর্থন করি। তবে, আমাদের কিছু বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। বিশেষ করে, ইউক্রেনকে পুনরায় অস্ত্র সজ্জিত করা এবং সেনা সমাবেশ করা উচিত নয়। যুদ্ধবিরতির সময় কিয়েভে পশ্চিমা সামরিক সহায়তাও বন্ধ করতে হবে।’
পুতিনের এই শর্তের প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এটিকে ‘কূটকৌশলপূর্ণ’ এবং ‘যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, পুতিন যুদ্ধবিরতির শর্তের আড়ালে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাইছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া আলোচনার সময়ক্ষেপণ করতে এবং কোনো ছাড় না দিয়ে নিজেদের সুবিধা আদায় করতে দক্ষ। পুতিনের সাম্প্রতিক মন্তব্য এবং জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়া উভয় পক্ষের মধ্যে গভীর বিভেদ তৈরি করেছে।
ইউক্রেন চাইছে, প্রথমে যুদ্ধবিরতি এবং পরে পশ্চিমা নিরাপত্তা জামানত সহ দীর্ঘমেয়াদি একটি শান্তি চুক্তি। অন্যদিকে, রাশিয়ার দাবি, যুদ্ধবিরতিসহ সব বিষয় একটি ‘ব্যাপক’ চুক্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে। এই চুক্তিতে ইউক্রেনের সামরিকীকরণ বন্ধ করা, পশ্চিমা সামরিক সহায়তা বন্ধ করা এবং ন্যাটোর বাইরে থাকার নিশ্চয়তা দেওয়ার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী এবং পুতিনের শর্তের প্রতি তাঁর সমর্থন থাকতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করেন, পুতিনের এই পদক্ষেপ ইউক্রেন সংকটের একটি জটিল দিক উন্মোচন করেছে। এটি একদিকে যেমন আলোচনার পথ খুলে দিতে পারে, তেমনি দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের সম্ভাবনাও তৈরি করতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান