মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তনের ফলে চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া শুল্ক নীতির কারণে এই দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ চরম আকার ধারণ করেছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে ব্যবসা এবং সাধারণ মানুষের উপর।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার কানাডা ও মেক্সিকোর থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যের উপর ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এর জবাবে চীন, কানাডা ও মেক্সিকোও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পণ্যের উপর শুল্ক বসিয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে পণ্যের দাম বাড়বে, যা ভোক্তাদের পকেটকে সরাসরি প্রভাবিত করবে। ছোট থেকে বড়—যেমন গাড়ি, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস—সবকিছুর দামই বেড়ে যেতে পারে। ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, কারণ তাঁদের আমদানি খরচ বাড়বে, যা শেষ পর্যন্ত পণ্যের দামে প্রভাব ফেলবে।
চীন, কানাডা ও মেক্সিকো—এই তিনটি দেশই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। চীন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কৃষি পণ্যের উপর ১৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে মার্কিন চিকেন, শুকরের মাংস, সয়াবিন এবং গরুর মাংস। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ঘোষণা করেছেন যে তাঁর দেশ প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করবে। মেক্সিকোও একই পথে হেঁটেছে, যদিও তারা নির্দিষ্ট শুল্কের পরিমাণ এখনো জানায়নি।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই শুল্ক যুদ্ধের কারণে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) হ্রাস পাবে এবং বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। বিশেষ করে কানাডা ও মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল অর্থনীতির তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুধু তাই নয়, এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, যা বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, এই শুল্ক নীতি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অনেক ব্যবসার কাঁচামাল চীন এবং মেক্সিকো থেকে আসে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের একটি বৃহৎ ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের বিক্রেতা কোম্পানি জানিয়েছে, তাদের ব্যবসার জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের পণ্যের প্রধান উৎস চীন ও মেক্সিকো।
এই পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের উপরও এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। চীনের উপর আরোপিত শুল্কের কারণে মোবাইল ফোন, খেলনা ও পোশাকের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়তে পারে। যদিও কিছু কোম্পানি পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে, তবে সরবরাহ শৃঙ্খলে পরিবর্তন আনা সহজ নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম কখন বাড়বে, তা এখনই বলা কঠিন। তবে খুব সম্ভবত দ্রুত পচনশীল পণ্যগুলোর দাম প্রথমে বাড়তে পারে। যেহেতু অনেক দেশই ফল ও সবজির জন্য বিদেশি আমদানির উপর নির্ভরশীল, তাই এই পণ্যগুলোর দাম দ্রুত বাড়তে পারে।
যদিও বাংলাদেশের উপর এই বাণিজ্য যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব এখনো দৃশ্যমান নয়, তবে বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির এই ধরনের পরিবর্তন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপর প্রভাব ফেলে, যা আমাদের দেশের অর্থনীতিকেও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস