যুক্তরাষ্ট্রের একটি অতি পরিচিত মুদ্রা হল পেনি, যা তৈরি করতে প্রায় চার সেন্ট খরচ হয়। কিন্তু এই ক্ষুদ্র মুদ্রাটি নিয়ে এখন চলছে বিতর্ক। দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পেনি তৈরি বন্ধ করার কথা বলেছিলেন। তাঁর মতে, সরকারের জন্য এটি লোকসানের কারণ। এই ঘোষণার ফলে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যারা এই পেনির ওপর নির্ভরশীল।
পেনি তৈরির খরচ নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই অনেকে বলে আসছেন, একটি পেনি তৈরি করতে সরকারের প্রায় চার সেন্ট খরচ হয়। ট্রাম্পের ঘোষণার পর সেই বিতর্ক আবারও মাথাচাড়া দিয়েছে। তবে পেনি বন্ধ করার সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রভাব পড়েছে একটি বিশেষ ধরনের ব্যবসার উপর।
আসলে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ও বিনোদন পার্কগুলোতে একটি বিশেষ ধরনের ব্যবসা চলে, যেখানে পেনি ব্যবহার করা হয়। এই ব্যবসায়ীরা পাইকারি দামে পেনি কিনে, বিশেষ মেশিনের সাহায্যে সেগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ছবি বা নকশা তৈরি করে বিক্রি করেন। এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, পেনি বন্ধ হয়ে গেলে তাঁদের ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে রয়েছেন পেনিস প্রেস মেশিন কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ব্রায়ান পিটার্স। তিনি জানান, পুরনো দিনের তামার পেনি (১৯৮২ সালের আগে তৈরি) তাঁদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সেগুলোতে ছবি ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়। এছাড়া, অ্যাঞ্জেলো রোসাতো নামের এক জুয়েলারি ব্যবসায়ী তাঁর শহরের ঐতিহাসিক দৃশ্য পেনির উপর ফুটিয়ে তুলেছিলেন।
পেনির পক্ষে থাকা মানুষেরা মনে করেন, ডিজিটাল যুগেও এই মুদ্রার গুরুত্ব রয়েছে। আমেরিকান নিউমিসম্যাটিক সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক উটে ওয়ার্টেনবার্গ বলেন, “পেনি ব্যবহারের সংস্কৃতি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের আর্থিক বিষয়ে রক্ষণশীলতার পরিচয় বহন করে।”
অন্যদিকে, অনেকে মনে করেন, ডিজিটাল অর্থনীতির যুগে পেনির প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে। তাঁদের মতে, ইলেক্ট্রনিক লেনদেনের বিস্তারের ফলে বাজারে প্রচুর পরিমাণে পেনি থাকলেও এর ব্যবহার কমেছে। তাই পেনি তৈরি বন্ধ করে দিলেও তেমন কোনো সমস্যা হবে না।
তবে, যারা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা চান পেনি চালু থাকুক। অ্যালান ফ্লেমিং নামের একজন জানান, তিনি তাঁর মেশিনের জন্য প্রচুর পরিমাণে নতুন পেনি সংগ্রহ করতে চান। তিনি আশা করছেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে। ফ্লেমিংয়ের মতে, “হয়তো আমাদের ওয়াশিংটনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং এলন মাস্কের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের কাছ থেকে কয়েক মিলিয়ন পেনি কেনার বিষয়ে একটি চুক্তি করতে হবে।”
তথ্য সূত্র: যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম।