চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ: প্রতিরোধের অঙ্গীকার এবং বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য প্রভাব
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অঙ্গীকার করেছে চীন। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও সম্প্রতি এক বক্তব্যে জানান, বাণিজ্য যুদ্ধে কারও জয় হয় না, কিন্তু তারা কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। চীনের জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে তিনি এই কথা বলেন।
ওয়াং ওয়েনতাও জানান, বেইজিং আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছে। তবে কোনো ধরনের চাপ বা হুমকির কাছে নতি স্বীকার করা হবে না। তিনি উল্লেখ করেন, ১৪০টি দেশের সঙ্গে চীনের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, যা তাদের জন্য অনেক সুযোগ তৈরি করে। চীন সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনীতি এবং আর্থিক বাজারকে শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন কৌশল তুলে ধরা হয়েছে, তবে নতুন কোনো বড় পদক্ষেপের ঘোষণা আসেনি।
চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা আলোচনার জন্য প্রস্তুত, তবে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে। ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইতোমধ্যে দুবার চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। এর জবাবে চীনও মার্কিন পণ্য ও কোম্পানির ওপর শুল্ক এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ওয়াং ওয়েনতাও বলেন, চীন অন্যান্য দেশের সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক চায়।
তিনি আরও বলেন, “হুমকি বা চাপ দিয়ে চীনকে দমিয়ে রাখা যাবে না। নিজেদের স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে চীনের দৃঢ়তা অবিচল।” তিনি যোগ করেন, “বাণিজ্য যুদ্ধে কোনো বিজয়ী থাকে না।” তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “যদি মার্কিন পক্ষ এই ভুল পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়, তাহলে আমরাও সেটার জবাব দেবো। শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবো।” তবে, তিনি এটাও উল্লেখ করেন যে, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চীন আলোচনা করতে প্রস্তুত।
চীন সরকার তাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রী জানান, তারা বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণের জন্য কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করছে এবং বিশ্বব্যাপী তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য সহায়তা করছে। রপ্তানি ঋণের জন্য আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর পাশাপাশি পরিষেবা এবং ই-কমার্সের বাণিজ্য বাড়াতেও তারা আগ্রহী।
চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের প্রধান ঝেং শানজিয়াং স্বীকার করেছেন যে, ২০২৫ সালের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রায় ৪.৬% থেকে ৪.৮% এর মধ্যে রয়েছে, যা সরকারের “প্রায় ৫%” লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। তিনি জানান, সরকার আরও বেশি ভোক্তা ব্যয় এবং বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য একটি বিশেষ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে।
চীনের অর্থমন্ত্রী ল্যান ফো-আন জানিয়েছেন, সরকার “জীবনযাত্রার মান এবং ভোগের” জন্য আরও বেশি অর্থ ব্যয় করবে। এছাড়াও, ঋণগ্রস্ত স্থানীয় সরকারগুলোকে সহায়তা করা হবে এবং শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করা হবে। তিনি আরও বলেন, “আমরা নিশ্চিত করব, প্রতিটি পয়সার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে।”
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে, বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে, বাংলাদেশের জন্য নতুন বাণিজ্য সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে।
তথ্য সূত্র: