চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের পর একটি বেসরকারি লুনার ল্যান্ডার সম্ভবত কাত হয়ে পড়েছে।
টেক্সাসের একটি কোম্পানি, ইনটুইটিভ মেশিনের তৈরি করা ‘আথেনা’ নামের এই মহাকাশযানটি বৃহস্পতিবার চাঁদে অবতরণ করে।
তবে অবতরণের পরপরই এটিতে কিছু সমস্যা দেখা দেয়।
জানা গেছে, প্রায় ১৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ‘আথেনা’ চাঁদের মাটিতে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নাকি এক বছর আগের প্রথম মহাকাশযানের মতো কাত হয়ে পড়েছে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
বিজ্ঞানীরা এর কারণ অনুসন্ধানে ব্যস্ত।
একইসঙ্গে, বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোর জন্য ল্যান্ডারের কিছু যন্ত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার আগে, চলতি সপ্তাহেই নাসা’র বাণিজ্যিক চন্দ্রাভিযান প্রকল্পের অধীনে টেক্সাসের আরেকটি কোম্পানির মহাকাশযান সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করে।
ইনটুইটিভ মেশিনের পাঠানো নতুন ‘আথেনা’ ল্যান্ডারটি পরিকল্পনা অনুযায়ী চাঁদ প্রদক্ষিণ করা শেষ করে।
প্রায় এক ঘণ্টার অবতরণ প্রক্রিয়া ভালোভাবেই সম্পন্ন হচ্ছিলো, কিন্তু শেষ মুহূর্তে এর লেজার নেভিগেশন সিস্টেমে গোলযোগ দেখা দেয়।
মিশন কন্ট্রোল টাচডাউন নিশ্চিত করতে কিছুক্ষণ সময় নেয়।
মিশন পরিচালক এবং কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা টিম ক্রেইন জানান, “আমরা চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করেছি।
তবে আমরা এখন এর অবস্থা জানার চেষ্টা করছি।”
অবতরণের কয়েক ঘণ্টা পর, ইনটুইটিভ মেশিনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভ আলটেমাস জানান, ‘আথেনা’ কীভাবে অবতরণ করেছে এবং এটি কাত হয়ে আছে কিনা, সে বিষয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
ল্যান্ডারটি তার নির্ধারিত লক্ষ্যের কাছাকাছি রয়েছে।
তবে নাসা’র ‘লুনার রিকনাইসন্স অরবিটার’-এর মাধ্যমে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এর সঠিক অবস্থান ও অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
গত সপ্তাহে উৎক্ষেপণ করা ‘আথেনা’ প্রায় ৩,৭৫,০০০ কিলোমিটার দূরের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল এবং সৌরশক্তি তৈরি করতে শুরু করে।
মিশন পরিচালকেরা এখন ল্যান্ডারটির ড্রিল চালু করা এবং একটি ড্রোনের সাহায্যে একটি খাদে নামানোর চেষ্টা করছেন।
নাসা’র শীর্ষ বিজ্ঞানী নিকি ফক্স বলেন, “অবশ্যই, ল্যান্ডারটির সঠিক অবস্থান জানা না গেলে, আমরা আসলে কী ধরনের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারবো, তা বলা কঠিন।”
ইনটুইটিভ মেশিনের আগের ল্যান্ডারটি একদিকে কাত হয়ে অবতরণ করলেও, এটি সফলভাবে কার্যক্রম চালিয়েছিল।
এর মাধ্যমে প্রায় অর্ধশত বছর পর যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় চাঁদে অবতরণ করতে সক্ষম হয়।
এর আগে, ১৯৭২ সালের অ্যাপোলো ১৭ মিশনের পর যুক্তরাষ্ট্র চাঁদে কোনো মহাকাশযান পাঠায়নি।
অন্যদিকে, এই সপ্তাহে ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেস নামের আরেকটি টেক্সাসভিত্তিক কোম্পানি তাদের ‘ব্লু ঘোস্ট’ ল্যান্ডারটির মাধ্যমে চাঁদের বুকে সফলভাবে অবতরণ করে।
এটি চাঁদের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবতরণ করে এবং এর মাধ্যমে ইতিমধ্যেই বিশ্লেষণের জন্য চাঁদের মাটি সংগ্রহ করা হয়েছে।
ইনটুইটিভ মেশিনের এবারের লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ মেরু থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরের একটি পর্বত মালভূমি।
তারা সেই স্থানে পৌঁছেছে, তবে তাদের ল্যান্ডারটি একেবারে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছেছে কিনা, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নাসা’র বাণিজ্যিক চন্দ্রাভিযান প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই মিশনগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে।
এর মূল উদ্দেশ্য হলো, চাঁদের ধূসর পৃষ্ঠে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো এবং মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা।
এছাড়া, এই বাণিজ্যিক ল্যান্ডারগুলো নাসা’র ‘আর্টেমিস প্রোগ্রাম’-এর অধীনে ভবিষ্যতে মহাকাশচারীদের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে।
নাসা’র কর্মকর্তারা আগেই জানিয়েছিলেন, এই ধরনের কিছু কম খরচের মিশনে ব্যর্থতা আসতে পারে।
তবে বেসরকারি পর্যায়ে চাঁদে আরও বেশি অভিযান চালানোর ফলে, সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সংখ্যা বাড়বে।
আথেনাতে ব্যবহৃত বরফ খনন যন্ত্র (ice drill) এবং অন্যান্য যন্ত্রের জন্য নাসা কয়েক কোটি ডলার খরচ করেছে।
এই মিশনে অন্যান্য যন্ত্রাংশ এবং দুটি রোভারের (rover) জন্য তারা ৬২ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকার বেশি) দিয়েছে।
ইনটুইটিভ মেশিনের তৈরি রকেট-চালিত ড্রোনটি অবতরণস্থলের কাছে একটি স্থায়ীভাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন খাদে নেমে জমাটবদ্ধ পানির সন্ধান করবে।
খরচ কমানোর জন্য, ইনটুইটিভ মেশিন তাদের স্পেসএক্স রকেটের মাধ্যমে তিনটি মহাকাশযান পাঠায়।
এর মধ্যে নাসা’র ‘লুনার ট্রেইলব্লেজার’ এবং অ্যাস্ট্রোফোর্জের ‘ওডিন’ বর্তমানে সমস্যা সম্মুখীন হচ্ছে।
নাসা জানিয়েছে, ‘লুনার ট্রেইলব্লেজার’ রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে এবং এটি চাঁদের চারপাশে তার কাঙ্ক্ষিত কক্ষপথে পৌঁছাতে পারবে না।
‘ওডিন’-ও নীরব হয়ে গেছে এবং তার গ্রহাণু পরিভ্রমণের পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস