মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রজাপতির সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে, যা পরিবেশ বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। ২০০০ সাল থেকে প্রজাপতির সংখ্যা ২২ শতাংশ কমে গেছে, যা জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি অশনি সংকেত।
গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে দেশটির ৪৮টি অঙ্গরাজ্যে। এতে দেখা গেছে, গত দুই দশকে প্রজাপতির সংখ্যা বছরে গড়ে ১.৩ শতাংশ হারে হ্রাস পেয়েছে। প্রায় ১১৪ প্রজাতির প্রজাপতির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যেখানে মাত্র ৯টির সংখ্যা সামান্য বেড়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কীটনাশকের ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আবাসস্থলের ক্ষতি—এগুলোই প্রজাপতি কমে যাওয়ার প্রধান কারণ।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির কীটতত্ত্ববিদ নিক হাদ্দাদ এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি জানান, “প্রজাপতির সংখ্যা গত ২০ বছর ধরে কমছে এবং এর কোনো প্রতিকারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।” গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কিছু পরিচিত প্রজাতির প্রজাপতির সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। উদাহরণস্বরূপ, লাল অ্যাডমিরাল প্রজাপতি ৪৪ শতাংশ এবং আমেরিকান লেডি প্রজাপতি ৫৮ শতাংশ কমে গেছে। এমনকি বহিরাগত শ্বেত বাঁধাকপি প্রজাপতিও ৫০ শতাংশ কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে প্রজাপতির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি কমেছে। অ্যারিজোনা, নিউ মেক্সিকো, টেক্সাস এবং ওকলাহোমা রাজ্যে গত ২০ বছরে প্রজাপতির সংখ্যা অর্ধেকের বেশি হ্রাস পেয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুষ্ক ও উষ্ণ অঞ্চলে বসবাসকারী প্রজাপতিগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, আবাসস্থলের ক্ষতি এবং কীটনাশকের ব্যবহার—এগুলো সম্মিলিতভাবে প্রজাপতির জীবনযাত্রাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
কর্নেল ইউনিভার্সিটির প্রজাপতি বিশেষজ্ঞ অনুরাগ আগরওয়াল মনে করেন, প্রজাপতির এই বিলুপ্তি মানুষের জন্য একটি সতর্কবার্তা। তিনি বলেন, “প্রজাপতি, টিয়া পাখি এবং শুশুকের মতো প্রাণীর হ্রাস আমাদের জন্য, আমাদের প্রয়োজনীয় ইকোসিস্টেম এবং প্রকৃতির জন্য নিঃসন্দেহে খারাপ লক্ষণ। তারা আমাদের বলছে যে আমাদের মহাদেশের স্বাস্থ্য ভালো নেই… প্রজাপতি প্রকৃতির সৌন্দর্য, ভঙ্গুরতা এবং প্রজাতিগুলোর আন্তঃনির্ভরশীলতার দূত। তাদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রজাপতিরা পরাগায়ণে সাহায্য করে, যা টেক্সাসের তুলা ফসলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে তারা মৌমাছির মতো ততটা প্রভাবশালী নয়। উইসকনসিন-ম্যাডিসন ইউনিভার্সিটির কীটতত্ত্ববিদ কারেন ওবারহাউজার বলেছেন, প্রজাপতি মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সংযোগ স্থাপন করে। এটি আমাদের শান্ত করে, সুস্থ করে এবং আনন্দিত করে।
এই গবেষণার ফল অন্যান্য পোকামাকড় এবং সারা বিশ্বের বাস্তুতন্ত্রের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মানুষের সচেতনতা এবং ছোট ছোট পদক্ষেপ—যেমন, বাগানে কীটনাশকের ব্যবহার কমানো এবং স্থানীয় গাছ লাগানো—প্রজাপতির জীবনযাত্রাকে উন্নত করতে পারে।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।