যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিটকয়েন সংরক্ষণে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।
এই আদেশের ফলে সরকার বিভিন্ন অপরাধ ও দেওয়ানি মামলায় জব্দ করা বিটকয়েনগুলো সংরক্ষণ করবে।
ট্রাম্পের এই নতুন আদেশের ফলে, সরকার ইতিমধ্যে বাজেয়াপ্ত করা প্রায় দুই লক্ষ বিটকয়েন বিক্রি করবে না, বরং সেগুলোকে তাদের ভল্টে জমা করে রাখবে।
ট্রাম্পের ‘ক্রিপ্টো জার’ ডেভিড স্যাকস এই তথ্য জানিয়েছেন।
স্যাকস আরও বলেন, এই রিজার্ভ হবে ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য একটি ডিজিটাল ফোর্ট নক্সের মতো, যা প্রায়শই ‘ডিজিটাল গোল্ড’ নামে পরিচিত।
আদেশে সরকারের বিটকয়েন হোল্ডিংয়ের একটি ‘পূর্ণ হিসাব’ চাওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা আগে কখনো নিরীক্ষণ করা হয়নি।
স্যাকস উল্লেখ করেছেন, গত এক দশকে মার্কিন সরকার প্রায় ১ লক্ষ ৯৫ হাজার বিটকয়েন বিক্রি করে দিয়েছে, যেগুলোর মূল্য ছিল প্রায় ৩৬ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার।
যদি সেই বিটকয়েনগুলো ধরে রাখা হতো, তবে সেগুলোর বর্তমান মূল্য হতো প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।
ডেভিড স্যাকস আরও জানান, এই আদেশের মাধ্যমে ট্রেজারি ও বাণিজ্য বিভাগ অতিরিক্ত বিটকয়েন সংগ্রহের জন্য বাজেট-নিরপেক্ষ কৌশল তৈরি করতে পারবে।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, একসময় বিটকয়েনকে ‘প্রতারণা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা ট্রাম্প এখন ডিজিটাল মুদ্রাকে সমর্থন করছেন।
গত নির্বাচনে জয়লাভের জন্য ক্রিপ্টো শিল্পের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ট্রাম্পকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাহায্য করেছিলেন।
ট্রাম্প নিজেকে ‘ক্রিপ্টো প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন, যা ক্রিপ্টো শিল্পের জন্য সহায়ক হবে এবং সম্ভবত তার নিজের ও পরিবারের আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটাবে।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প ক্রিপ্টো-সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যার মধ্যে বিটকয়েন রিজার্ভ তৈরি একটি।
তিনি কংগ্রেসকে শিল্প-বান্ধব আইন পাস করার জন্য চাপ দিচ্ছেন এবং তার প্রশাসনের অধীনে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) কিছু প্রধান ক্রিপ্টো কোম্পানির বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থাগুলো শিথিল করতে শুরু করেছে।
আগামী শুক্রবার, ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ক্রিপ্টো শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে একটি ‘ক্রিপ্টো শীর্ষ সম্মেলন’ করতে চলেছেন।
বিটকয়েন হলো সবচেয়ে পুরনো এবং জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি।
২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের প্রতিক্রিয়ায় এটি তৈরি হয়েছিল।
একজন বেনামী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মাধ্যমে তৈরি হওয়া বিটকয়েন, শুরুতে শখের বশে তৈরি হলেও, বর্তমানে প্রায় ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার বাজার মূল্যের একটি সম্পদে পরিণত হয়েছে।
যদিও দৈনন্দিন জীবনে এটি এখনো ব্যাপক ব্যবহারের পর্যায়ে আসেনি, তবে এটি একটি মূল্যবান সম্পদ হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, যা ব্যাংক, সরকার বা অন্য কোনো প্রভাবশালী সত্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়।
বিটকয়েনের সরবরাহ সীমিত, যার পরিমাণ ২ কোটি ১০ লক্ষ কয়েন।
এই সীমাবদ্ধতা এর সমর্থকদের মতে এটিকে মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে একটি ভালো প্রতিরোধক করে তোলে।
সমালোচকরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন যে বিটকয়েনের কোনো অভ্যন্তরীণ মূল্য নেই, তবে এটি তাদের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে এবং দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
গত বছর ট্রাম্পের জয়ের পর ক্রিপ্টোর দাম বেড়ে যায়।
ডিসেম্বরের শুরুতে যখন বিটকয়েনের দাম প্রথমবারের মতো ১ লক্ষ ডলার অতিক্রম করে, তখন ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, “আপনাদের স্বাগতম!!!”
যদিও, পরবর্তীতে দাম কিছুটা কমে আসে।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের কারণে বিটকয়েনের দামে তাৎক্ষণিক কোনো উল্লম্ফন দেখা যায়নি, ঘোষণার সময় এর দাম ছিল প্রায় ৮৬ হাজার ডলার।
এই নির্বাহী আদেশে ‘ইউএস ডিজিটাল অ্যাসেট স্টকপাইল’ তৈরিরও ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে সরকার বিটকয়েন ছাড়াও অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলো জমা রাখবে।
সম্প্রতি, ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে তিনি সরকার অন্যান্য কম পরিচিত ক্রিপ্টোকারেন্সি যেমন এক্সআরপি, সোলানা এবং কার্ডানো ধরে রাখতে চান।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস