যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন আলোচনার বিষয় হলো ডিমের দাম। অনেকে বলছেন, আসন্ন নির্বাচনে ভোটারদের মন জয় করতে ডেমোক্র্যাট দল এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিশেষ করে ডিমের দামের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। তাদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে জনগণের মধ্যে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।
যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে প্রতি ডজনের গড় দাম ছিল ৪.৯৫ ডলার, যা ২০২৩ সালের জানুয়ারির রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। দেশটির কোনো কোনো অঞ্চলে এই দাম আরও বেশি। উদাহরণস্বরূপ, সান ফ্রান্সিসকোর একটি সুপারমার্কেটে এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১০.৯৯ ডলারে।
মার্কিন কৃষি বিভাগ ধারণা করছে, চলতি বছরে ডিমের দাম গত বছরের গড় দামের চেয়ে প্রায় ৪১ শতাংশ বাড়তে পারে। এরই মধ্যে কিছু রেস্টুরেন্ট ডিমের জন্য অতিরিক্ত সারচার্জ নেওয়া শুরু করেছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেক সদস্য মনে করেন, ট্রাম্পের কারণে এই মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।
ডেমোক্র্যাটদের এই পদক্ষেপ তাদের কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। কর্মীদের একটি অংশ মনে করে, ট্রাম্পের স্বেচ্ছাচারী আচরণ ও সংবিধানের প্রতি তার অশ্রদ্ধা একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। তবে দলের অন্য অংশ মনে করে, সাধারণ আমেরিকান, বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের কাছে এই বিষয়গুলো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাদের প্রধান চিন্তা হলো পরিবারের জন্য খাবার জোগাড় করা।
মিশিগানের কংগ্রেসম্যান ক্রিস্টেন ম্যাকডোনাল্ড রিভেট বলেন, “সংবিধানিক সংকট বা গণতন্ত্র নিয়ে দার্শনিক আলোচনা তাদের কাছে বিলাসিতার মতো, যাদের দিন কাটে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায়।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ডেমোক্র্যাটদের এই নতুন কৌশল মূলত তাদের দুর্বলতা ঢাকতে নেওয়া হয়েছে। গত নির্বাচনে অর্থনৈতিক কারণে অনেক ভোটার রিপাবলিকানদের দিকে ঝুঁকেছিলেন, যার ফলস্বরূপ রিপাবলিকানরা হোয়াইট হাউস এবং কংগ্রেসের উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ লাভ করে।
তবে ডিমের দামের ওপর মনোযোগ দিয়ে ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পকে কতটা আটকাতে পারবে বা দলের প্রগতিশীল অংশের সমর্থন ধরে রাখতে পারবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এই বিতর্কের মধ্যে, ট্রাম্প অবশ্য ডিমের দাম বাড়ার জন্য তার পূর্বসূরি ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “জো বাইডেন ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।” অন্যদিকে, শিল্প ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বার্ড ফ্লু বা পাখির ফ্লু রোগের কারণে ডিমের উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।
বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে কতটা সংবেদনশীল, তা বোঝানোর জন্য সম্প্রতি ট্রাম্পের সহযোগী ইলন মাস্কও তার সামাজিক মাধ্যমে বাইডেন প্রশাসনকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, “বাইডেন প্রশাসনের নির্দেশে ডিম পাড়া প্রায় ১৫ কোটি মুরগিকে হত্যা করা হয়েছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের এই রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোও প্রায়ই ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর জন্য খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব বা জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের মতো বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।