যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ (Department of Homeland Security) দেশটির বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা রক্ষীদের ট্রেড ইউনিয়ন চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই পদক্ষেপের ফলে নিরাপত্তা বিভাগের প্রায় ৪৭ হাজার কর্মীর ওপর ট্রেড ইউনিয়নের সুরক্ষা দুর্বল হয়ে যাবে।
শুক্রবার (গতকাল) এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়, যা ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের শ্রমিক অধিকার খর্ব করার একটি উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফেডারেল সরকারের কর্মচারী ইউনিয়ন ‘আমেরিকান ফেডারেশন অব গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ’ (AFGE) একে ‘উস্কানিমূলক আক্রমণ’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এই ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত কর্মীরাই মূলত বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখাশোনা করেন এবং উড়োজাহাজে অস্ত্র ও বিস্ফোরক প্রবেশ করতে বাধা দেন।
বিবৃতিতে নিরাপত্তা বিভাগ জানায়, দুর্বল কর্মীরা যেন বহাল থাকতে না পারে এবং দেশের পরিবহন ব্যবস্থা নিরাপদ রাখতে এই চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।
তবে, এই যুক্তির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাট সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ইউনিয়ন।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ আরও জানায়, এই পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন নেটওয়ার্কগুলোতে আরও কার্যকর এবং আধুনিক কর্মী বাহিনী তৈরি হবে।
এর মাধ্যমে আমেরিকানদের জন্য দ্রুত এবং সুরক্ষিত ভ্রমণের সুযোগ তৈরি হবে।
তবে, ইউনিয়ন বলছে, মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় তাদের উপর প্রতিশোধ নিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই ইউনিয়নটি ফেডারেল সরকারের প্রায় আট লক্ষ কর্মীর প্রতিনিধিত্ব করে।
প্রসঙ্গত, গত বছর মে মাসে তৎকালীন টিএসএ প্রশাসক ডেভিড পেকোসকে এবং ইউনিয়নের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
চুক্তি অনুযায়ী কর্মীদের বেতন বাড়ানোর কথা ছিল, যা কর্মীদের মধ্যে মনোবল বাড়াতে সহায়তা করেছে।
তবে, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরই পেকোসকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
বর্তমানে টিএসএ-এর প্রশাসক বা উপ-প্রশাসক পদে কেউ নেই।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য বেন্নি জি. থম্পসন এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, কর্মীদের মনোবল কমিয়ে দেওয়ার এটি একটি অপচেষ্টা।
তিনি উল্লেখ করেন, বাইডেন প্রশাসন কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি ও নতুন চুক্তি দেওয়ার পর টিএসএ-এর কর্মীদের চাকুরি ছাড়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
এদিকে, সমালোচকদের মতে, এই সিদ্ধান্তের পেছনে ‘প্রজেক্ট ২০২৫’ নামে একটি রক্ষণশীল পরিকল্পনার ছায়া রয়েছে।
এই পরিকল্পনায় টিএসএ ইউনিয়ন বিলুপ্ত করা এবং পরবর্তীতে পুরো সংস্থাটিকে বেসরকারি খাতে হস্তান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে।
৯/১১-র সন্ত্রাসী হামলার পর টিএসএ গঠিত হয়।
ওই হামলায় সন্ত্রাসীরা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ফাঁক গলে ছুরি ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে উড়োজাহাজ হাইজ্যাক করে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হানে।
এরপর থেকে বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় এবং যাত্রী ও তাদের মালামাল পরীক্ষার প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস