জাতিসংঘের মানবিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বিশেষ করে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের তহবিল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, যা বিভিন্ন দেশের দরিদ্র ও বিপদগ্রস্ত মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
**তহবিল বন্ধের প্রভাব: জরুরি পরিস্থিতিতে সহায়তা হ্রাস**
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই ‘গুরুতর কাটছাঁট’-এর বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, এর ফলস্বরূপ আফগানিস্তানে প্রায় ৯০ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্য ও সুরক্ষামূলক সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। ইউক্রেনে গত বছর প্রায় ১০ লক্ষ মানুষকে নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল, সেটিও স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া, সুদান থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের জন্য অর্থ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য কমানোর সিদ্ধান্তের কারণে অনেক আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID) এর মাধ্যমে পরিচালিত প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলারের বেশি তহবিলের চুক্তি বাতিল করেছে এবং বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০,০০০ চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।
জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এখন তাদের কার্যক্রম পুনর্গঠন করতে, কৌশলগতভাবে বাজেট কমাতে এবং বিকল্প তহবিলের সন্ধান করতে বাধ্য হচ্ছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের সমর্থন পুনর্বহাল করার জন্য আবেদন জানাচ্ছে।
**শরণার্থী ও অভিবাসীদের জন্য সাহায্য হ্রাস**
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল বন্ধের কারণে তাদের কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। সংস্থাটি গত বছর তাদের প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের বাজেটের ৪০ শতাংশের বেশি অর্থ যুক্তরাষ্ট্র থেকে পেয়েছিল। বর্তমানে তারা প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, উগান্ডা এবং দক্ষিণ সুদানে প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার বাস্তুচ্যুত নারী ও শিশুর জন্য পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। ইথিওপিয়াতেও ২ লক্ষ বাস্তুচ্যুত নারী ও শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (IOM)-ও একই পরিস্থিতির শিকার। তারা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের কারণে কর্মী, কার্যক্রম এবং সুবিধাভোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। IOM-এর প্রায় ৩,০০০ কর্মীকে ছাঁটাই করার খবর পাওয়া গেছে, যারা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের পুনর্বাসন কর্মসূচিতে কাজ করতেন।
**স্বাস্থ্যখাতে সংকট: রোগের বিস্তার ও চিকিৎসা ব্যাহত**
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ তাদের কার্যক্রমের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। উদাহরণস্বরূপ, হাম ও রুবেলার একটি বৈশ্বিক পরীক্ষাগার নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণভাবে ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, যার বার্ষিক খরচ প্রায় ৮ মিলিয়ন ডলার এবং এটি সম্পূর্ণরূপে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক অর্থায়িত হত। এই তহবিল কমানোর ফলে রোগের বিস্তার রোধে বিশ্বব্যাপী কার্যক্রমও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একইসঙ্গে, উগান্ডায় ইবোলা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাতেও এর প্রভাব পড়েছে।
জাতিসংঘের এইডস বিষয়ক সংস্থা (UNAIDS) জানিয়েছে, অনেক দেশে এইচআইভি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল ছিল ‘মেরুদণ্ডস্বরূপ’। উদাহরণস্বরূপ, উগান্ডায় এইডস প্রতিরোধের জন্য মোট বাজেটের ৫৫ শতাংশ আসত যুক্তরাষ্ট্র থেকে। বর্তমানে তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এইডস রোগীদের জন্য ড্রপ-ইন সেন্টার এবং অন্যান্য পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে। হাইতিতে প্রায় ৭ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দেশটির প্রায় ৭১ শতাংশ সহায়তা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক অফিসের (OCHA) প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ জীবন বাঁচানোর জন্য তাদের কাজের ওপর ‘মর্মান্তিক আঘাত’ হেনেছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস