মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক অস্থিরতা: ট্রাম্পের নীতি ও তার প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু অর্থনৈতিক পদক্ষেপ, যেমন শুল্ক বৃদ্ধি, সরকারি চাকরি হ্রাস এবং ব্যয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা – এসব কারণে দেশের অর্থনীতিতে উদ্বেগ বাড়ছে। যদিও বেকারত্বের হার এখনো স্থিতিশীল (ফেব্রুয়ারিতে ৪.১%), এবং কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি এসেছে, তবুও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে, অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা সূচক উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা অতীতে মন্দার ইঙ্গিত দিয়েছিল। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ট্রাম্পের এই নীতিগুলি অর্থনীতির জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে, বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ফলে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হতে পারে এবং এর ফলস্বরূপ জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে।
ফেব্রুয়ারি মাসের শ্রমবাজারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অনেক মানুষ অর্থনৈতিক কারণে পার্ট-টাইম কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিনোদন ও আতিথেয়তা খাতেও কাজের সুযোগ কমেছে। এছাড়াও, সরকারি খাতে কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে, যা অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ নয়।
ট্রাম্প প্রশাসন অবশ্য তাদের নীতির পক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছে। তাদের মতে, শুল্ক আরোপের ফলে কিছু শিল্পখাতে, বিশেষ করে গাড়ি শিল্পে, কাজের সুযোগ বেড়েছে। তবে, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাজারের অস্থিরতা বাড়ছে এবং বিনিয়োগকারীরাও তাদের সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা বোধ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করছে। এর অংশ হিসেবে চীন, মেক্সিকো এবং কানাডার উপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ইউরোপের দেশগুলোর উপরও শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা রয়েছে, যা বিশ্ব বাণিজ্যকে আরও কঠিন করে তুলবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে আরও সুনির্দিষ্ট হতে হবে এবং শুল্কের হারও কমাতে হবে। এছাড়া, তারা মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপের আগে ভালোভাবে গবেষণা করা প্রয়োজন।
ফেডারেল রিজার্ভের প্রকাশিত তথ্যেও শুল্ক এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের একজন উপদেষ্টা মনে করেন, সরকার যদি অর্থনীতির দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারে, তবে বেসরকারি খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ আসবে। তবে, সরকারি ঋণের উপর নির্ভরশীলতা কমানো কঠিন হতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া কিছু পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে সরকারি কর্মীর সংখ্যা কমানো। এই পদক্ষেপের ফলে ফেডারেল সরকারের কর্মীর সংখ্যা হ্রাস করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আরও বেশি দৃশ্যমান হতে পারে।
মার্কিন অর্থনীতির এই অস্থিরতা বিশ্ব অর্থনীতি, বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কোনো মন্দা দেখা দিলে তা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়। এছাড়া, বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য শুল্ক বাড়লে বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানি উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যা হতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস